গায়ক নয়, অভিনয়শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন লতা

|

নাইটিঙ্গেল অব ইন্ডিয়া লতা মঙ্গেশকর তার দীর্ঘ সঙ্গীত ক্যারিয়ারে বাংলাসহ ভারতের ৩৬টি ভাষায় প্রায় ৩০ হাজার গান গেয়েছেন। সঙ্গীতনির্ভর বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বছরের পর বছর ধরে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন শিল্পী। তবে গায়ক হিসেবে নয়, অভিনয়শিল্পী হিসেবেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বিবিসির একটি প্রতিবেদন বলছে, লতা চল্লিশের দশকে অভিনয় শুরু করেন। সেসময় তিনি অন্তত আটটি মারাঠি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

যখন লতা চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু করেন, ওই সময় চলচ্চিত্রে গান গেয়ে ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগ ছিল সীমিত। তবে ১৯৪৩ সালে ‘গজাবাউ’ নামে একটি মারাঠি ছবিতে তিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন। এটাই চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান।

মূলত লতার পরিবারে ছবির গানকে খুব ভালো চোখে দেখা হতো না। পারিবারিকভাবে লতাদের বাড়িতে চর্চা হতো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের। তার বাবা ছিলেন একজন গায়ক, থিয়েটারের অভিনেতা এবং মারাঠি ভাষায় গীতিনাট্যের প্রযোজক। কিন্তু হঠাৎ তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেললে চলচ্চিত্র আর থিয়েটার কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তাদের মহারাষ্ট্রের বাড়িটিও নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। তখন তারা ভারতেরই পুনেতে চলে যান। পরে বাবা মারা গেলে পুরো পরিবার মুম্বাইতে স্থানান্তরিত হয়। সেসময়ই তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন।

অভিনয় জীবন নিয়ে লতা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মেকআপ, লাইট এগুলো কখনোই ভালো লাগতো না তার। এই কথা বলো, ওই কথা বলো; এধরনের আদেশে তিনি অস্বস্তিবোধ করতেন। একবার এক পরিচালক তাকে বলেছেন, তার ভ্রু ছাঁটতে হবে। কারণ সেগুলো বেশি ছড়ানো। এতে লতা খুবই আহত হয়েছিলেন। তবে পেশাদারিত্বের প্রয়োজনে তিনি সেবার ভ্রু ছেঁটে অভিনয় করেছিলেন।

লতা সে অর্থে আনুষ্ঠানিক পড়াশুনা করেননি। বিবিসির একটি প্রতিবেদন বলছে, তাদের একজন গৃহকর্মী তাকে মারাঠি পড়তে শিখিয়েছেন। আর স্থানীয় একজন পুরোহিত শিখিয়েছেন সংস্কৃত পড়তে। অবশ্য তিনি আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারের অন্যান্যদের কাছে কিছু পড়াশুনা শিখেছিলেন।

১৯৪৯ সালে ‘মহল’ চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার পর থেকে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৬২ সালে চীন-ভারতের যুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সেনাদের স্মরণে লতা গান ‘ইয়ে মেরে ওয়াতান কে লোগো’, আর রাতারাতি ছড়িয়ে পড়া এই গানটি শুনে নাকি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পড়েছিল।

আর এরপর থেকে আর পেছেনে ফিরে তাকাতে হয়নি লতাকে। একে একে ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গায়কদের সাথে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। মোহাম্মদ রাফি, কিশোর কুমার আর নামধন্য সব গায়কের সাথে গেয়েছিলেন ডুয়েট। এরপর হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি। ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত হন লতা মঙ্গেশকর। এছাড়া ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ এবং ১৯৬৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ অর্জন করেন তিনি। এছাড়া ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাব প্রদান করে লতাকে।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্য ভারতের শহর ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। আর আজ মুম্বাইতে মারা গেলেন কিংবদন্তী এই সঙ্গীতশিল্পী।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply