রাশিয়ার হামলায় বর্তমানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি প্রধান শহর। তবে ইউক্রেন দখল নয়, বরং ন্যাটোর সদস্য হওয়া থেকে দেশটিকে আটকাতেই এই হামলা করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে রাশিয়া। তবে এখন শোনা যাচ্ছে, ইউক্রেন দখল করে দেশটিতে নিজের মতো করে সরকার গঠনের পুরো ছক কষে ফেলেছে রাশিয়া। পুতিনের সেই পুতুল সরকারের প্রধান হিসেবে একটি নামও সামনে এসেছে ইতোমধ্যে।
মার্কিন মাল্টিন্যাশনাল ম্যাগাজিন ফরচুনে বুধবার (২ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এর আগে ইউক্রেনের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম দ্য কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট তাদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেয়। সেখানে উঠে আসে ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিকটর ইয়ানুকোভিচের নাম। বলা হচ্ছে, ভিকটরকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পদে বসাতে চান পুতিন।
জানা গেছে, ভিকটর এখন বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে অবস্থান করছেন। যুদ্ধের সপ্তম দিন বুধবারে ‘প্ল্যান বি’ হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এ পরিকল্পনা কথা টুইটে জানায় দ্য কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট। অনেকের আশঙ্কা, জেলেনস্কির সরকারের পতন ঘটিয়ে ইউক্রেনে নিজের বিশ্বস্ত ভিকটরকেই বসাতে চান পুতিন।
⚡️Media: Putin wants to reinstate Yanukovych as president of Ukraine.
Viktor Yanukovych is allegedly in Minsk, and the Kremlin is preparing an operation to replace Zelensky with the ex-president ousted by the EuroMaidan Revolution in 2014, according to Ukrainska Pravda’s sources
— The Kyiv Independent (@KyivIndependent) March 2, 2022
এই ভিকটর ইয়ানুকোভিচ একসময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৫০ সালের ৯ জুলাই ইউক্রেনের ইয়েনাকিভ শহরে জন্মগ্রহণ করেন ভিকটর ইয়ানুকোভিচের। তার মা নার্স এবং বাবা ট্রেন চালক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ডাকাতির অভিযোগে তিন বছর এবং ১৯৭০ সালে মারামারির কারণে ২ বছর জেলও খেটেছিলেন ভিকটর। তবে পরবর্তীকালে এই ঘটনাগুলোকে কৈশোর বয়সে করা ভুল হিসেবেই ব্যাখ্যা দেন তিনি।
১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হন ভিকটর। ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা তাকে ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত সেই পদেই ছিলেন তিনি। পরে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন ভিকটর।
২০১০ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ভিকটর। তবে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রাজনীতিতে গণবিক্ষোভের (মেইডেন রেভোলিউশন) মুখে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। সেই সময় ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়া পালিয়ে যান ভিকটর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সেই সময়। ভিকটর এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় নামেন। তখন ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গিয়ে পুতিনের ছত্রছায়ায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান তিনি। পুতিনের বিশ্বস্ত হিসেবেও পরিচিত হন তখন। এখন সেই ভিকটরকেই নিজের ঝুলি থেকে বের করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পদে বসাতে চান পুতিন, শোনা যাচ্ছে তেমনটিই।
বলা হচ্ছে, ভিকটরকে ক্ষমতায় বসালে ইউক্রেন শাসনে বেশ সুবিধাজনক আবহাওয়া তৈরি করতে পারবেন পুতিন। তবে সে ক্ষেত্রেও একটি প্রশ্ন থাকছে। ভিকটরকে জোর করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার শর্তে আপাতত ইউক্রেনবাসী তা মেনে নিলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা এই ব্যবস্থা মানবেন কি না, সেটি বলা কঠিন।
এসজেড/
Leave a reply