বইমেলায় এত বইয়ের ভিড়ে পাঠকের মনের তৃষ্ণা মিটছে কতটুকু? লেখক-প্রকাশকেরা যা বললেন

|

প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসে কয়েক হাজার নতুন বই। লেখক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন অনেকে। কিন্তু এত বইয়ের ভিড়ে পাঠকের মনের তৃষ্ণা মিটছে কতটুকু?

কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, এত ভুলে ভরা বই, বাক্য দুর্বল। প্রকাশযোগ্য আসলে নয়। এত বই পৃথিবীর আর কোথাও বের হয় বলে মনে হয় না।

তবে মানসম্পন্ন নয়, এমন বই প্রকাশ করতে দেয়া উচিত বলে মনে করেন এ কথা সাহিত্যিক। যুক্তি হিসেবে আনিসুল হক বললেন, আমরা যদি মান বিচার করতে যেতাম তাহলে বুদ্ধদেব বসুর প্রথম কবিতার বই মর্মবাণী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের প্রথম কবিতার বই বের হতো না।

বই হচ্ছে মনের খোরাক, জ্ঞানের অধার। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতিবছর অন্তত ৫ হাজার নতুন বই প্রকাশ হয় বলে জানা গেছে। সেসব কতটা মানসম্পন্ন কিংবা মানহীন, পাঠকই তার সবচেয়ে বড় বিচারক।

‘বই কিনে কেউ কখনও দেউলিয়া হয় না’, কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত এই উক্তি আমলে নিয়ে প্রকাশকেরা বলছেন, এখন পরিস্থিতি এমন দেউলিয়া না হলেও ক্ষতির মুখোমুখিও হতে চান না সাধারণ পাঠক।

আগামী প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা ওসমান গনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে অনেক বই বই-ই নয়। বই আকারে অনেক বই প্রকাশিত হওয়ার কারণে অনেক কাগজ নষ্ট হয়েছে।

ভালো পাণ্ডুলিপির অভাবের পাশাপাশি দেশে বেশিরভাগ প্রকাশনার সম্পাদনা পরিষদ নেই। সম্পাদক নেই, প্রুফ রিডারও নেই। অনেক নতুন লেখকের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে বই প্রকাশের অভিযোগ তো রয়েছেই। যাদের মেলা ঘিরে থাকে তাড়াহুড়ো। নিশ্চিত হয় না প্রকাশনার মান।

অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক জানালেন, মানহীন বইয়ের ক্ষেত্রে প্রফেশনাল হতে হলে প্রকাশকদেরই এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

অভিযোগ আছে, প্রকাশকরা সবসময় সঠিক পাণ্ডুলিপি নির্বাচন করেন না। ইতিহাসও কথা বলে সে সুরেই। নোবেল বিজয়ী অ্যাবসার্ড নাট্যকার স্যামুয়েল ব্যাকেটের প্রথম বই ৪০ বার ফিয়েছে দিয়েছেন প্রকাশক। জীবনান্দ দাসের রচনাও প্রথম দিকে আমলে নিতে চাননি অনেকে। লেখক জীবনের শুরুতে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে হুমায়ূন আহমেদেরও।

আনিসুল হক জানালেন, বইয়ের চারপাশে কতটুকু জায়গা থাকবে, ফন্টের মাঝে কতটুকু ব্যবধান থাকবে সেটিরও মাপ রয়েছে। কিন্তু ৫-৬টি প্রকাশনী ছাড়া আর কারও বিক্রেতা, কর্মচারী ব্যতীত কোনো স্টাফ নেই।

মেলায় মানহীন বই নিয়ে পাঠকদের আভিযোগও নতুন নয়। আবার না কিনে না পড়েই গড়পরতা মন্তব্যের প্রবণতাও রয়েছে।
বইমেলায় আসা একজন জানালেন, যারা নতুন তারা লিখতে লিখতে সামনে অগ্রসর হবেন। আর প্রত্যাশা করেন, আস্তে আস্তে মানসম্পন্ন বই আসবে।

লেখক-পাঠকদের প্রত্যাশা ইরানি কবি ওমর খৈয়ামের সেই উক্তির মতোই, এমন পুস্তক আসুক, যা অনন্ত যৌবনা হয়ে থেকে যাবে যুগ যুগ।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply