ভাড়া করা অস্ত্রেই হত্যা করা হয় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিরকে। ঘটনার পরপরই বিদেশে পালিয়ে যায় প্রধান সন্দেহভাজন আসামি। যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বসুরহাট পৌর মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান দুষছেন একে অপরকে। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে পরিবার। আর তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, প্রধান সন্দেহভাজনকে পাওয়া গেলেই দেয়া হবে অভিযোগপত্র।
কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশির হাটে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে দুইপক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষের সময় দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী ও গুলিবিদ্ধরা। তারা জানান, গেলো কয়েক দশকেও এমন সংঘর্ষ দেখেননি তারা। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তখন শীতকাল ছিল। আর মুজাক্কিরের পরনে ছিল তিনটি জামা। তাই রক্তক্ষরণের ভয়াবহতা প্রথমে অনুধাবন করতে পারেননি তারা।
মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেন বাবা নুরুল হুদা। সেই মামলায় এখনো অভিযোগপত্রই দেয়নি তদন্ত সংস্থা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্বজনরা। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাবা নুরুল হুদা।
প্রশ্ন উঠেছে, একটি গ্রামে কীভাবে এসেছিল এত অস্ত্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের নিকটবর্তী সন্দীপের উড়িরচর থেকে আনা হয়েছিল অস্ত্রগুলো। সেখানকার একটি ডাকাত দলের কাছ থেকে এমন বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র এক সপ্তাহের জন্য ভাড়া নেন শরিফ ও মাসুদ নামের দুই ব্যক্তি। নাজিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন। সাংবাদিক মুজাক্কিরের মৃত্যুর পরদিনই তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। এখনো উদ্ধার করা যায়নি একটি অস্ত্রও।
মুজাক্কির হত্যা মামলায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে শরিফ, মাসুদসহ তিনজন। তবে, মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারায় অভিযোগপত্র আটকে আছে বলে জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তারা সব কথাই বলে। কিন্তু কার বন্দুক থেকে ছোড়া গুলিতে মুজাক্কিরের মৃত্যু ঘটেছে তা আমরা এখনও বের করতে পারিনি। এই মামলার অস্ত্রটিও উদ্ধার হয়নি। যার কাছ থেকে অস্ত্র নেয়া হয়েছিল তাকেই আবার অস্ত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়, যা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। সেই লোক নিজেও এই মামলার একজন আসামি। তাকে গ্রেফতার করতে পারিনি। ঘটনার পরপরই আমরা জেনেছি, তিনি বিদেশ চলে গেছেন।
হত্যাকাণ্ডের জন্য বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল একে অপরকে দায়ী করেছেন। আবদুল কাদের মির্জা বলেন, কোম্পানীগঞ্জের অপরাজনীতির হোতা মিজানুর রহমান বাদল তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুজাক্কিরকে হত্যার জন্য। অস্ত্রসহ তাদের ছবি সংগ্রহের পরই মূলত মুজাক্কিরকে হত্যা করা হয়।
মিজানুর রহমান বাদল বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বসুরহাট থেকে চাপরাশির হাটে এসে আমার বাড়ি আক্রমণের প্রেক্ষিতে; সেক্ষেত্রে আবদুল কাদের মির্জা আমাকে দায়ী করবেন নাকি করবেন না বা তার দায়ী করায় কী এসে যায় তা আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় না। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আবদুল কাদের মির্জা।
দুই নেতাই বলছেন, অপরাধী যে গ্রুপেরই হোক, দ্রুত তাদের আনা দরকার আইনের আওতায়। আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আমার কোনো অনুসারী যদি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্য আপত্তিকর, মনগড়া ও ভিত্তিহীন: সোহেল তাজ
এম ই/
Leave a reply