একজন রিকশাওয়ালার ৫০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডিম বিক্রেতার ৪০টি আর ফেরিওয়ালার নামে আছে ৩০টি অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টে বছরে লেনদেন হয় কোটি টাকারও বেশি। শুনে চমকে গেলেও, ঘটনা সত্য। যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রাজধানীসহ সারা দেশে আছেন এমন কিছু মানুষের তথ্য, যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভাড়া দিচ্ছেন অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের, যাদের প্রতারণার টাকা লেনদেন হয় এসব অ্যাকাউন্টে।
এমনই একজন হলেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রাজু, যিনি পেশায় একজন দিনমজুর। ডাচ-বাংলা, সিটি, সোনালী, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এবি ব্যাংকে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা-থানার ব্রাঞ্চে তার অন্তত ৪০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত এক বছর এসব অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে কোটি টাকারও বেশি!
রাজুর মতো এমন আরও নয়জনের জনের খোঁজ পাওয়া গেছে; যারা সবাই, দিনমজুর বা নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের সবার নামে আছে ২৫টি, ৩০টি আবার কারো কারো নামে আছে ৪০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট।
সবশেষ, ছয় মাস বা এক বছরে এসব অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন ৩০-৪০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। অথচ, এসবের একটি টাকাও তাদের নয়। তাহলে কাদের? গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত বলছে, অ্যাকাউন্টগুলো অবৈধ বিদেশীদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মূলত আফ্রিকার কিছু অবৈধ নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন করে এসব অ্যাকাউন্টে।
ডিবি-ডিএমপির উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এদের সবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে, তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে আরেক দালাল। কোনো রকম ভেরিফিকেশন ছাড়াই ব্যাংকের লোকেরাই ইন্ট্রোডিউসার হিসেবে এদের অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে এবং সেসব অ্যাকাউন্টে প্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হচ্ছে।
রাজু, ইউসুফের মতো দিনমজুরদের লোভ দেখিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া ১১ নাইজেরিয়ান সম্প্রতি ধরা পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। তাদের অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করায় গত বছর আগস্ট মাসে দিনমজুর চক্রকেও আটক করা হয়।
এরকম এক অ্যাকাউন্টধারী জানান, আমাকে দিয়ে ২০-২১ টি অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছে। সিগনেচার করিয়ে কার্ড, চাক বই সব নিয়েছি। মাস শেষে ২০-২৫ হাজার টাকা পেতাম।
আটক আরেকজন বলেন, ওরা বলেছে পোলাপানদের দিয়ে অ্যাকাউন্ট করাতে। যত বেশি অ্যাকাউন্ট ততবেশী পারসেনটেজ দেয়া হবে বলেছিল তারা।
ভাড়ায় খাটানো এসব অ্যাকাউন্টে বিপুল লেনদেন হলেও দেখেও দেখে না ব্যাংকগুলো। অস্বাভাবিক লেনদেনে নজরদারিও নেই ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যেকোনো আয়ের মানুষ যতো ইচ্ছা ততো একাউন্ট খুলতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু, সেসব একাউন্ট অবৈধকাজে ব্যবহার হলে এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলায় কোনো সমস্যা নেই
গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
/এসএইচ
Leave a reply