স্টাফ করেসপনডেন্ট, নেত্রকোণা:
নেত্রকোণার কলমাকান্দায় টানা ১৫ দিন বৃষ্টির পর সোমবার (২৩ মে) সকাল থেকে রোদ ওঠায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বৃষ্টির কারণে কৃষকের কাটা ধান নষ্ট হওয়ায় ধান শুকাতে পাকা রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠসহ খোলা জায়গা খুঁজছেন কৃষকরা।
জেলার কলমাকান্দা উপজেলার চত্রংপুর গ্রামের কৃষক শামীম আহম্মেদের বাড়ির উঠানেও বন্যার পানি উঠেছে। আঙিনার ধান শুকানোর স্থান থেকে পানি না নামায় ধান শুকানোর স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকাকে। তার এই ধান শুকানোর পদ্ধতি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে।
স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ দিন ধরে উপজেলাজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। তবে সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।তাদের ধারণা, বৃষ্টিপাত আর না হলে দুদিনের মধ্যেই পানি বিপদসীমার নিচে চলে যাবে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ওই উপজেলার প্রধান নদী উব্দাখালীসহ উপজেলার সব নদ-নদীর পানি হাওড়ে প্রবেশ করায় উপজেলা জুড়ে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। বন্যার পানি ও শ্রমিক সঙ্কটের
কারণে উপজেলার প্রায় ২০ শতাংশ বোরো ধান কৃষকরা এখনও ঘরে তুলতে পারেননি। সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় ধান ঘরে তুলতে শ্রমিকদের সঙ্গে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ কৃষক পরিবারের লোকজনদের ধান কাটতে দেখা গেছে।
এদিকে, বেশ কয়েক দিন পর রোদ উঠলেও বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের জায়গায় পানি উঠে পড়ায় কৃষকরা ধান শুকাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আবার জায়গার অভাবে অনেকে বেছে নিয়েছেন দূর- দূরান্তের পাকা সড়ক, খোলা জায়গা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে।
উপজেলার চত্রংপুর গ্রামের কৃষক শামীম আহম্মেদ বলেন, এ বছর তিনি আট একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তার মধ্যে পাঁচ একর জমির ধান কেটেছেন। বাকি ধান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় শ্রমিকরা কোনো রকমে ওই ধান কাটতে শুরু করেছে। তবে বেশিরভাগ ধান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে, বেশ কয়েক দিন ধরে রোদ না থাকায় ঘরে ধান থাকতে থাকতে অঙ্কুর(চারা) গজিয়ে গেছে। সোমবার রোদ উঠলেও তার ধান শুকানোর স্থানগুলো প্রায় কোমর সমান পানির নিচে থাকায় জায়গার অভাবে ধান শুকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। তাই, তিনি দুটি নৌকার ছাদে অল্প অল্প করে ধান শুকাচ্ছেন।
কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আটটি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ১৬৫টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ।
/এসএইচ
Leave a reply