মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র- সবখানে তিনি রাজত্ব করেছেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। নিজের অভিনয় দিয়ে কয়েক দশক তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’র সেরাজ তালুকদার, ‘সংশপ্তক’এর কানকাটা রমজান কিংবা ‘শ্যামল ছায়া’র গায়করূপী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে মানুষ মনে রাখবে অনেকদিন। নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন, তিনি হুমায়ুন কামরুল ইসলাম (ফরীদি)। আজ প্রয়াত এ তারকার ৭০তম জন্মদিন।
জাত অভিনেতা ছিলেন তিনি, রক্তে মিশে ছিলো অভিনয়, নাট্য জগতের সবাই বুঝে ফেলেছিলো ধূমকেতুর জন্ম হয়েছে, একদিন শাসন করবে এই যুবক। সেদিনের হিসেব এক চিলতেও ভুল হয়নি, টানা তিন দশক তার ম্যাজিকাল অভিনয় দিয়ে বুঁদ করে রেখেছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালি জাতিকে।
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। জন্ম ঢাকায় হলেও শৈশব-কৈশোর কেটেছে ঢাকার বাইরে। বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরতে হয়েছে দেশজুড়ে। যে কারণে তার প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনাও হয়েছে তার বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে।
১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম বাক্সবন্দি করে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেছেন পরবর্তীতে অভিনয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়া ফরীদি।
যুদ্ধের পরে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় ফিরলেও ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আর ফেরেননি তিনি। ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অর্থনীতি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে অনার্স সম্পন্ন করেন। তবে দুর্দান্ত ফলাফল করেও পেশা হিসেবে বেছে নেন অভিনয়কে।
ছাত্র থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন ফরীদি। এর আগে, ১৯৬৪ সালে প্রথম কিশোরগঞ্জে নিজের মহল্লার একটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন ‘নিখোঁজ সংবাদ’ শিরোনামের নাটকে। ফরিদীর প্রথম অভিনয় করা সিনেমার নাম ‘হুলিয়া’।
এরপর মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সব মাধ্যমেই সমানতালে আলো ছড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন দেশের শোবিজের অন্যতম সেরা অভিনেতা। নায়ক-খলনায়ক দুই চরিত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল। তবে দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।
‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। এছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য ২০১৮ সালের মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন এই অভিনেতা।
২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফাগুনের আগুনে বিষাদের কালো আভা ছড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তী, কাঁদিয়েছিলেন কোটি ভক্তকে। আজকের দিনে তাকে গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে যমুনা নিউজ।
/এসএইচ
Leave a reply