পদ্মা সেতু একটি জবাবের নাম

|

পদ্মাসেতু। ছবি: সংগৃহীত।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্প পদ্মা সেতু। দুর্নীতির অভিযোগ, অর্থায়ন সরিয়ে নেয়া, সমালোচনা আর রাজনৈতিক বাহাসে কম ঘোলা হয়নি জল। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন সরিয়ে নেয়ার দশ বছরের মাথায় নিজেদের অর্থেই সেতু নির্মাণ করে জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও কানাডার আদালত এই প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি। দেশি-বিদেশি লবিস্টদের কারণেই অর্থায়ন সরিয়েছিল বিশ্বব্যাংক এমনটাই দাবি সরকারের।

রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করবে পদ্মা সেতু। যদিও নির্মাণ পথটা সহজ ছিল না এই সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ২০১১ সালে এই প্রকল্পে অর্থায়নে চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। সেতু নির্মাণে পরামর্শকের কাজ পায় কানাডার এসএনসি-লাভালিন। কাজ পেতে কোম্পানিটি বাংলাদেশের দায়িত্বশীলদের ঘুষ দিয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে তা প্রমাণের আগেই অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক।

এরপর তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগ ও সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার গ্রেফতারসহ নানা নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। ওই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। তাকেও সরে যাওয়ার শর্ত দেয়া হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সরানোয় ড. ইউনুসের হাত আছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ছেড়ে কথা বলেননি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকেও। বিচার শেষে দুর্নীতির অভিযোগকে কানাডার আদালত ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজব’ বলে আখ্যায়িত করে।

বিশ্বব্যাংক প্রকল্প থেকে সরে গেলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা দেয় সরকার। ২০১৫ সালে কাজ শুরু করে ২০১৮ সালে তা শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। নদীশাসন, নকশায় পরিবর্তন, করোনাসহ নানা কারণে কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ঠেকে। এই ব্রিজ তৈরির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে আরও মানবসম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের উদ্যোগে এমন প্রকল্প করা যেতে পারে বলে মনে করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।

নানা সমালোচনা আর বিশ্ব মোড়লদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণ, দেশের অর্থনীতির সক্ষমতার প্রমাণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাসউদ্দীন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক যে ধাক্কা খেয়েছে, আশা করি তারা তাদের স্বভাব পরিবর্তন করবে। এই ঘটনার পর যতো প্রকল্প বা আলোচনা করেছে, তারা অনেক যুক্তিসঙ্গতভাবে করেছে। বাংলাদেশ থেকে এই আঞ্চলিক অনেক দেশও অনুপ্রাণিত হয়েছে, এবং আমরা এমন কাজ ভবিষ্যতে আরও করতে পারবো।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকার প্রথম বাজেট কেনো শেষ পর্যন্ত ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় ঠেকলো তা নিয়েও আছে সমালোচনা। তবে ছয় দশমিক এক কিলোমিটার এই সেতু শেষ পর্যন্ত ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশের সাহসের প্রতীক হিসেবেই।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply