স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী:
গত ২৭ মে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছিলেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের আমখোলা বাজারের বাসিন্দা ফিরোজ শিকাদার (২৯)। প্রায় সপ্তাহখানেক পর তার সন্ধান মেলে ভারতের চেন্নাইয়ে। নিখোঁজের দশদিন পর মঙ্গলবার (৭ জুন) ভোররাতে তিনি মহিপুর থানায় উপস্থিত হন। সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সামনে কুয়াকাটা থেকে চেন্নাই যাওয়া, চেন্নাই থেকে বিমানে কলকাতায় আসা এবং কলকাতা থেকে ট্রেনে বেনাপোলে আসাসহ পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তবে তার কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা দিলে পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মহিপুর থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটা থেকে ফিরোজের চেন্নাই যাবার বিষয়টি অস্পষ্ট। এছাড়া তার কথাবার্তায় অসংলগ্নতা পাওয়ায় পরবর্তী করণীয় বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে, সোমবার দুপুর বারোটার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বের হয়ে বিকালে পোর্ট থানায় নেয়া হলে সেখান থেকে ফিরোজ শিকদারকে মাইক্রোবাসযোগে সরাসরি মহিপুর থানায় নিয়ে আসেন তার আত্মীয়-স্বজন।
ফিরোজের পুরো বক্তব্যকে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ পর্যটনবান্ধবরা সাজানো নাটক আখ্যায়িত করে প্রকৃত ঘটনা বের করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
ফিরোজ জানান, আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে গত ২৭ মে দুপুরে গোসল করার সময় ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায় সে। ১৫-২০ মিনিট পর পানির উপরে উঠে একটি কলাগাছ পেয়ে সেটি নিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা সাগরে ভাসার পর একটি মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা তাকে উদ্ধার করে। এরপর শনিবার অর্থাৎ ২৮ তারিখ শেষ বিকালে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তাকে তুলে দেয় ট্রলারের জেলেরা। এরপর ৫-৬ দিন সেই জাহাজটি সাগরে চলার পর তাকে একটি অফিসে নিয়ে আসে। তখন জিজ্ঞাসা করলে বলে এটি চেন্নাই। এমন সময় একজন অফিসার কাগজে একটি স্বাক্ষর রেখে তাকে দুই হাজার রুপি দিলে এক হাজার পঞ্চাশ রুপি দিয়ে একটি মোবাইল সেট কেনেন তিনি। পরে কোনো এক অফিসার তাকে একটি মোবাইল সিম দিলে সেই সিম মোবাইলে ভরে গত শনিবার দুপুরে তার ভাই মাসুদ শিকদারকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা তুলে ধরে।
ফিরোজ আরও জানান, এরপর বিকালে নৌবাহিনীর অফিসাররা তাকে চেন্নাই বিমানবন্দরে নিয়ে যায় এবং রাত ১০টার বিমানে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়। একদিন রাখার পর সোমবার সকালে তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হয়। ট্রেন থেকে নেমে ৪০ টাকা দিয়ে অটো সিএনজিতে চড়ে দুপুরে বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন তিনি। তার কাছ থেকে বিমান ও ট্রেনের টিকিট এবং মোবাইলফোন কেনার সকল কাগজপত্র রেখে দেয় ইমিগ্রেশনের কর্তারা। এ সময় তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন থেকে সিমটিও রেখে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খালি সেটটি দিয়ে দেয়। পরে বেনাপোল পার হয়ে বাংলাদেশের অংশে আসলে পুলিশ তার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র দেখতে চায়। কিন্তু ফিরোজ তখন কিছুই দেখাতে পারেনি। এ সময় তার বাড়ির লোকজন সেখানে উপস্থিত আছে এবং তার কোনো এক নিকটাত্মীয় কাস্টমসে চাকরি করে বলে তার রেফারেন্স দেয়। পরে মহিপুর থানায় তার নিখোঁজ হবার জিডির কপি দেখায় পুলিশকে। পরে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মহিপুর থানার সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে ফিরোজকে।
মহিপুর থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ফিরোজ শিকদারকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কলাপাড়া সার্কেল) আবুল কালাম আজাদের অফিসে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে স্যার যে সিদ্ধান্ত নেয়ার নিবে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি বিএম কামাল হোসেন জানান, আমাদের কাছে ফিরোজ শিকদারকে পাঠানো হয়েছে ইমিগ্রেশন থেকে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। সেই অনুযায়ী আমরা ফিরোজ শিকদারকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তার কাগজপত্র বা পাসপোর্ট ছিল কিনা সেটি দেখার বিষয় ইমিগ্রেশন পুলিশের, আমাদের না। ইমিগ্রেশন পুলিশই ভালো বলতে পারবে কীভাবে ফিরোজ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ইলিয়াস জানান, ইমিগ্রেশনে তাকে আটকানোর পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে বলেছে ওপারের একটা লোক তাকে দিয়ে গেছে। এখন কোন লোক কীভাবে তাকে দিয়ে গেছে সেটি ফিরোজই বলতে পারে। পরে আমার দায়িত্ব ছিল তাকে পোর্ট থানায় পাঠানো, আমি সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।
জেডআই/
Leave a reply