সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার উপরে, দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন

|

সিনিয়র করেসপনডেন্ট, সিরাজগঞ্জ:

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে যমুনা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে জেলার দু’টি পয়েন্টেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলগুলো দ্রুত প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন এই এলাকার মানুষজন।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে গত ১৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি আরও ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যেমন যমুনার চরের নতুন ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, তেমনি নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি ঢোকায় অনেকেই নিরাপদ কোনো স্থানে গিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা।

এদিকে পানিবৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেকেই উঁচু বাধ বা নির্মাণাধীন কোনো ভবনে ঠাঁই নিচ্ছেন, পার করছেন মানবেতর জীবন। অনেকেই আবার রাস্তার ধারে নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন অস্থায়ী ছাপরা ঘর।

শুক্রবার ভোর থেকে শুরু করে সোমবার সকাল পর্যন্ত যমুনা নদীতে তীব্র ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে মুহূর্তের মধ্যে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়।

এলাকাবাসী জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীসহ নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করে চৌহালী উপজেলাধীন খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, কৈজুরী এলাকায় যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন শুরু হয়। এতে শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে বহু বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে স্থানীয় আব্দুর মতিন বলেন, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা হোক। এখনই ভাঙন বন্ধ না হলে বিলীন হয়ে যাবে বিশাল এলাকা।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা হোক। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই।

এদিকে গত শনিবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার সিরাজগঞ্জের নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে সৃষ্ট আগাম বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রস্তুত আছে।

তিনি বলেন, এ বছর অতি বৃষ্টিপাতে আগাম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটসহ অনেকগুলো জেলা শহরে পানি ঢুকে গেছে। মানুষ চরম কষ্টে আছে। এছাড়া যমুনা ও পদ্মাতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে নদী ভাঙন চলছে। সব কিছু মিলে এবার মনে হচ্ছে একটা শক্ত বন্যা মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।

কবির বিন আনোয়ার আরও বলেন, এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলমান রয়েছে। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্রাহ্মনগ্রামসহ দুই এক জায়গায় কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে কাজ চলছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply