এদিকে, চিরবিদায়ের দিনে বাবাকে নিয়ে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ফারুকী। সেখানে তিনি লিখেছেন, ইলহামের (ফারুকী ও তিশার মেয়ে) একটু ঠান্ডা লেগেছিল। তাই আমরা ওকে ঘরের বাইরে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করে চার দিন আগে তিশা ওকে নিয়ে নাখালপাড়া যায়, আব্বাকে দেখাতে। আব্বার শরীরটা অনেক দিন থেকে খারাপ। কথা বলতে পারছিল না ঠিকমতো। তিশার কোলের ওপর হাত রেখে আব্বা ইশারা করে, ইলহামের হাতটা যেন আব্বার হাতের ওপর রাখে। তিশা হাতটা রাখার পর আব্বা অনেকক্ষণ পরম মমতায় তাকিয়ে ছিল। আব্বা হয়তো জানত, নাতনির সাথে এটাই তার শেষ দেখা।
তার মেয়ের স্মৃতিতে দাদা থাকবে না, এই অফসোস উঠে এসেছে ফারুকীর স্ট্যাটাসে। লিখেন, আব্বা আজকে সকালে চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আমরা সবাই জানতাম আব্বার শরীর খুব খারাপ। কিন্তু তারপরও আমি সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যেন আব্বা আরও কয়টা বছর আমাদের সাথে থাকে। যেন ইলহাম আরেকটু বড় হয় দাদার সাথে, যাতে ওর স্মৃতিতে দাদা থাকে। ইলহামের হয়তো দাদার স্মৃতি বলে আর কিছু থাকল না। ও হয়তো মনেও করতে পারবে না দাদার মুখটা। ও হয়তো জানবেও না প্রাচীন বংশের এই বড় সন্তান কী করে নিজের ভাগ্য গড়েছে, কী করে কোন এক গ্রামের দুর্গম রাস্তা ছাড়িয়ে এ শহরের বুকে এসে দাঁড়িয়েছে!
বাবার জীবনযাপনের একটি ছোট্ট চিত্রও উঠে এসেছে ফারুকীর স্ট্যাটাসে। লিখেছেন, নিজের হাতে বানানো নাখালপাড়ার বাড়িটা আব্বার খুব প্রিয় ছিল। এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও গিয়ে উনি থাকতে চাইতেন না। এমনকি আমার বনানীর বাড়িতে উনাকে জোর করে একটা রাতও রাখতে পারি নাই। আব্বা আজ চিরদিনের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। বাড়ির সামনে রাস্তায় পানি জমল কি না, ছাদের ঘর তালা দেয়া হলো কি না, মসজিদের নতুন তলার কাজ শেষ হলো কি না—এইসব সকল উৎকণ্ঠার শেষ আজকে। এইতো জীবন। আম্মা গিয়েছিলেন উনার প্রিয় শুক্রবারে। আব্বাও গেলেন শুক্রবারে, হজের দিনে! আসলেই কি গেলেন?
Leave a reply