জন্মদিনে আবদুল আলীম স্মরণ

|

আব্দুল আলীম (১৯৩১-১৯৭৪)

বাংলাদেশের লোকসংগীতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম আবদুল আলীম। লোকসংগীত ছাড়াও পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি, ইসলামি গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কালজয়ী লোকসঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলীমের ৯২তম জন্মদিন আজ। জন্মদিনে যমুনা নিউজ তাকে স্মরণ করছে গভীর শ্রদ্ধায়।

‘হলুদিয়া পাখি’র মতো ‘মেঘনার কূলে ঘর’ বাঁধতে চেয়েছিলেন তিনি। সংসারে খুঁজেছিলেন আপনজনদের, খুঁজেছিলেন পদ্মা নদীর কূল-কিনারা, জানতে চেয়েছিলেন এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া। বাংলা লোক সঙ্গীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আবদুল আলীম, যেখানে জীবন, জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে গেছে তার গানের মাধ্যমে। দরাজ কণ্ঠের অধিকারী এ শিল্পীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। তবে পাঠশালায় পড়ার সময় তার স্থানীয় ওস্তাদ সৈয়দ গোলাম আলীর কাছ থেকে সঙ্গীতের তালিম নেন আলীম। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে ‘ও তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ও আফতাব ওই বসলো পাটে’ গান দুটি রেকর্ড করেন। দুটি গানের মাধ্যমেই তার পরিচিতি ও সুখ্যাতি ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় যান এবং সেখানে আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাথে গান করেন। এরপর তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ওপর দীক্ষা নিয়ে যাত্রা দলে কাজ করতে শুরু করেন। দেশ বিভাগের পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। এছাড়াও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আব্দুল আলীম গান করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এসবের মধ্যে কিছু গান তার নিজের রচনা। আর কিছু গান অন্যান্য বিখ্যাত গীতিকারের রচনা।  

পেশাগত জীবনে আব্দুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। নিজ প্রতিভা গুণে শিল্পী আবদুল আলীম পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৭৭ সালে একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। এছাড়াও পেয়েছেন, পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সঙ্গীত পরিবেশন করে আব্দুল আলীম পেয়েছেন পাঁচটি স্বর্ণ পদক।

১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আব্দুল আলীম চলে যান না ফেরার দেশে। তবে তিনি চলে গেলেও তার গানে বিরহ-বেদনা-বিচ্ছেদের মাধ্যমে তিনি ফিরে এসেছেন বারবার। তার দরাজ মাখা কণ্ঠ শুনলে আজও প্রশান্ত হয় বাঙ্গালির মন। ক্ষণজন্মা এ কিংবদন্তি বেঁচে থাকলে হয়তো আজ পালন করতেন তার ৯২তম জন্মদিন। তার জন্মদিনে যমুনা নিউজের পক্ষ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।  

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply