বাংলাদেশের বিপক্ষে চলতি সিরিজে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন সিকান্দার রাজা। টি-টোয়েন্টিতে দারুণ পারফরম্যান্সের পর প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছেন ১৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। পাকিস্তান এয়ার ফোর্স কলেজে পড়াশুনার সময় পাওয়া মানসিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণগুলো তাকে পথ দেখাচ্ছে। যুদ্ধবিমানের পাইলট হতে না পারলেও, মানুষ হিসেবে সবসময় নিজেকে যোদ্ধা ভাবেন সিকান্দার রাজা।
যুদ্ধবিমানের পাইলট হতে চাওয়া মন সহজে লড়াইয়ে ছাড় দেবার নয়। তাই মানুষ হিসেবে সবসময় নিজেকে যোদ্ধাই ভাবেন পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম নেয়া সিকান্দার রাজা বাট। ১১ বছর বয়সে ফাইটার বিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। পাকিস্তান এয়ারফোর্স কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৬০ হাজার প্রার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছিলেন তৃতীয়। কিন্তু যে চোখে স্বপ্ন দেখেছিলেন আকাশে ওড়ার, সেই চোখের সমস্যাতেই হলো স্বপ্নভঙ্গ। সিকান্দার রাজা চলে যান স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেও তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হলো না। অবশ্য কী করে হবে! ক্রিকেট বিধাতা ভাগ্যে যে লিখে রেখেছিলেন ক্রিকেট মাঠের এক লড়াকু সৈনিকের চরিত্র।
গ্লাসগোতেই সেমি প্রফেশনাল ক্রিকেট দিয়ে যাত্রা শুরু। ২০০২ সালে পরিবারের সঙ্গে অভিবাসী হিসেবে জিম্বাবুয়েতে পাড়ি জমান সিকান্দার রাজা। ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওডিআই ক্রিকেট দিয়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখেন তিনি। ক্যারিয়ার শুরুর ৯ বছর পর এখন রাজত্ব করছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে। ২২ গজের লড়াইয়ে কখনও ব্যাট হাতে, কখনও বল হাতে উড়ছেন যুদ্ধবিমানের মতোই।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছিলেন অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংস দিয়ে, পরের ম্যাচে করেন ৬২। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে রান করতে না পারলেও প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছেন অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংস। ২০১৩ সালের পর দলকে দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে জয়ের স্বাদ। চাপের মুহূর্তেও এমন অকুতোভয় মানসিকতা কোথায় পেলেন তিনি? এ প্রসঙ্গে সিকান্দার রাজা বলেন, আমি কখনোই হাল ছেড়ে দেই না। ইনজুরিকে আমি পরোয়া করি না। মিথ্যা বলবো না, সাড়ে তিন বছর পাকিস্তান এয়ারফোর্স কলেজে কাটানো সময় আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। মানসিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণগুলো এখন আমাকে পথ দেখাচ্ছে। আমি হয়তো যুদ্ধবিমানের পাইলট হতে পারিনি। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমি সবসময়ই একজন যোদ্ধা।
গত বছর মার্চে সিকান্দার রাজার শরীরে টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পায় চিকিৎসকরা। এরপর করা হয় অস্ত্রোপচার। হাতের ইনফেকশন থেকে দেখা দেয় ক্যান্সারের শঙ্কা। সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনযুদ্ধ জয়ের পর সিকান্দার রাজা প্রতিনিয়ত জিতে চলেছেন কোটি ক্রিকেটভক্তের মন।
/এম ই
Leave a reply