পরকীয়া করতে গিয়ে গণপিটুনি, স্ত্রীর পরামর্শে আত্মগোপন; মিথ্যা খুনের মামলায় ১৪ জনের ঘুম হারাম

|

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

৩৫ দিন আগে নুর ইসলাম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগে ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। তবে খুন ও গুমের শিকার মনে করা ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২১ আগস্ট) সালথা থানার ওসি মো. শেখ সাদিক গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পরকীয়া করে ধরা পড়ার পর নুর ইসলামকে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তার স্ত্রী আন্না বেগম ও পরিবারের অন্যান্যরা। আর আত্মগোপনে পাঠিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের মামলাটিও করেছিলেন তার স্ত্রী।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৪ জুলাই সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন নুর ইসলাম চৌধুরী। এ ঘটনায় ২৭ জুলাই ১৪ জনকে আসামি করে ফরিদপুরে আদালতে মামলা করেন তার স্ত্রী আন্না বেগম। এ মামলায় আসামি করা হয় উপজেলার রাঙ্গারদিয়া গ্রামের মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বর, সানোয়ার মাতুব্বর, মুনছুর মুন্সী, হাবিব শেখ, আনিছ শেখ, হাসান শেখ, বাবলু মোল্যা, রাকিব শেখ, দবির শেখ, কবির শেখ, ইসমাইল মোল্যা, হিলাল শেখ ও হিমায়েত শেখকে। আদালত মামলাটি সালথা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক ফরহাদ হোসেনকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৪ জুলাই রাতে স্থানীয় স্লুইসগেট এলাকায় চা খেতে যান নুর ইসলাম চৌধুরী। রাত ১১ টার পরও তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বন্ধ পাওয়া যায় মোবাইল নম্বারটিও। পরে একজন জানায়, তার লাশ নদীতে ভাসছে। অবশ্য নদীতে খুঁজতে গিয়ে তার লাশ পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে তাকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বাদীর সন্দেহ হয়, নুর ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করেছে আসামিরা।

এদিকে, ওই মামলার আসামি মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বরসহ অন্যরা বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় এক মাস আমাদের এলাকাছাড়া করে রেখেছে নুর ইসলামের স্ত্রী। এই হয়রানির জন্য আমরাও মামলা করবো। তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটন করায় সালথা থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তারা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্ত শুরু করার পর অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেও বেশকিছু তথ্য পাই। এসব তথ্যের সূত্র ধরেই নুর ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। মামলার আসামিদের একজনের
বোনের সাথে পরকীয়া প্রেম ছিল নুর ইসলামের। ঘটনার রাতে ওই আসামির বোনের সাথে দেখা করতে গিয়ে ধরা পড়ে মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, মার খাওয়ার পর স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্যদের পরামর্শে নুর ইসলাম বগুড়ায় তার শ্যালক ওমর ফারুকের বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি একটি চাকরিও শুরু করেন। এদিকে তার স্ত্রী আদালতে তাকে হত্যা ও লাশ গুমের মামলাটি করেন।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেখ সাদিকও জানান একই কথা, নুর ইসলামকে লুকিয়ে রেখে তার স্ত্রী মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তাকে উদ্ধার করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেন। পুলিশ এখন নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগমকে খুঁজছে। মিথ্যা মামলা দায়ের করায় তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply