গরুর ডে-কেয়ার সেন্টার, ঝিনাইদহে ব্যতিক্রমী এক পেশা

|

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

গরুর ডে-কেয়ার সেন্টার! শুনতে অবাক লাগলেও ঝিনাইদহের মহেশপুরের একটি গ্রামে এমন ভিন্ন পেশার সাথে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তি। গ্রামের খামারিদের গরু এনে সারাদিন মাঠে চরিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরিয়ে দেন তারা। এজন্য গরু প্রতি তাদের দিতে হয় মাসিক বেতন।

ঝিনাইহের মহেশপুর উপজেলার করিঞ্চা গ্রামের ইদ্রিস আলী জানান, এক যুগ হলো তিনি এ পেশায় আছেন। প্রতিদিন সকাল হলেই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে হাক ডাকেন তিনি। তার ডাকে গরুর মালিক ও খামারিরা গোয়াল ঘর থেকে ছেড়ে দেন গরু। গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত গিয়ে গরু নিয়ে দল বেঁধে ছুটে চলেন মাঠের দিকে। আর মাথায় ছাতা নিয়ে গরুর দেখভাল করেন রাখালরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরিয়ে সন্ধ্যায় আবার পৌঁছে দেন বাড়িতে।

সরকারি হিসাবেই এই করিঞ্জা গ্রামে ২ হাজার ৫৪০টি গরু আছে। আর স্থানীয়দের হিসাবে গরুর সংখ্যা তিন হাজারের অধিক। গ্রামটিতে প্রায় ৪ শ পরিবারের বসবাস রয়েছে। যাদের প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে একের অধিক গরু। এমন অনেক পরিবারও রয়েছে যাদের ৪০টির বেশি গরু আছে। গরুগুলো চরানোর জন্য গ্রামে ৬ জন রাখাল রয়েছেন। এছাড়া কেউ কেউ নিজের গরু নিজেই মাঠে নিয়ে যান। সে ক্ষেত্রেও রাখালের দলের সঙ্গেই যান তারা।

ইদ্রিস আলী জানান, এই গরু চরিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। গরু প্রতি ২ শত টাকা করে পেয়ে তার মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় হয়। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন এই কাজের সঙ্গে জড়িত।

আরেকজন আব্দুল হাকিম জানান, গরুগুলো তাদের পোষ মেনে গেছে। যেভাবে তাদের চলতে বলা হয় সেভাবেই চলে। কখনও তারা দলের বাইরে যায় না। একই পেশার শামীম হোসেন জানান, মাঠে খাইয়ে গরু পালন করা খুবই সহজ। যা খোলা মাঠ না থাকায় অনেক স্থানে হয় না। আবার দল বেঁধে মাঠে নেয়ার অভ্যাসও নেই।

করিঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, তার নিজের ৯টি গরু আছে। যেগুলো রাখালের কাছে দিয়ে দেন। মাঠে খাওয়ানোর পর বাড়িতে অল্প খাবার দিলেই চলে। তিনি বলেন, গাভিগুলো দুধ দেয়। কৃষকরা সারাবছর দুধ বিক্রি করেন। একটি দেশি জাতের গাভি ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত দুধ দেন। ৬০ টাকা কেজি দরে এই দুধ তারা বিক্রি করেন। গরু বড় করে লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।

করিঞ্চা এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আসাদুল ইসলাম জানান, একটি দেশি জাতের গরু বাড়িতে রেখে পালতে গেলে প্রতিদিন ঘাষ, ভুষি, খৈল, চালের কুড়ো মিলিয়ে কমপক্ষে ১ শত ৫০ টাকা থেকে ২শ টাকা ব্যয় হয়। সেখানে মাঠে চরানো হলে ১ শত টাকা খরচ করলেই চলে। এক্ষত্রে ১ শত ৫০ টাকা ব্যয় কম হয়। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় দল বেঁধে চলার সময় সবাই তাদের পথ ছেড়ে দেন, কেউ গরুর গায়ে হাতও দেন না।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার জানান, ডে-কেয়ার সেন্টারের এই ধারণা সত্যিই ইনোভেটিভ। এতে একদিকে লাভবান হচ্ছে খামারিরা। অন্যদিকে প্রত্যন্ত পল্লিতে বেকার সমস্যার সমাধানও হয়েছে। এই সুবিধা থাকায় গ্রামের স্বাবলম্বীরাও গরু পালনের দিকে ঝুঁকছে।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply