ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে চলছে ইরানি চলচ্চিত্রের জয়জয়কার

|

হাউমান সায়েদির ‘ওয়ার্ল্ড ওয়্যার ৩’ সিনেমার একটি দৃশ্য।

চলছে গত ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ৭৯তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব। যা চলবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সমগ্র পৃথিবী থেকে এবার এ উৎসবে অংশ নিয়েছে অসংখ্য সিনেমা। তবে সব ছাপিয়ে ইরানি সিনেমাগুলোরই যেন জয়জয়কার চলছে এবার।

প্রতিকূলতা অনেক, তবু সব বাধা আর চোখরাঙানি উপেক্ষা করে একের পর এক সিনেমা বানিয়ে চলেছেন ইরানের নির্মাতারা। বিশ্বজুড়ে সাড়াও ফেলছে সেগুলো। বরাবরই আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতে গুরুত্ব পায় ইরানি সিনেমা। তবে এ বছরের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা।

বার্লিন, কান ও কার্লোভিভ্যারির পর এবার ভেনিসেও সরব উপস্থিতি ইরানি সিনেমার। নির্মাণ, গল্প কিংবা অভিনয় সবকিছুতেই এগিয়ে। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগেই রয়েছে ইরানের দুটি সিনেমা। ভাহিদ জালিলভান্দ পরিচালিত ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়াল’ ও জাফর পানাহির ‘নো বেয়ারস’। এছাড়া নানা বিভাগ মিলিয়ে ভেনিসে এ বছর লড়ছে ইরানের পাঁচটি সিনেমা।

তবে বেশিসংখ্যক সিনেমা থাকার কারণেই যে ইরানি সিনেমা আলোচনায় রয়েছে, তা নয়। বরং আলোচনার কেন্দ্রে আছে সেখানকার নির্মাতাদের সংগ্রামী ভূমিকার কারণে। দেশটির প্রথম সারির প্রায় সব নির্মাতাই এখন কারাগারে বন্দী। যে নির্মাতারা বাইরে আছেন তাদের ঘিরে আছে রাষ্ট্রের চোখরাঙানি, আছে হামলা-মামলা-গ্রেফতারের হুমকি। তবু সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ইরানি নির্মাতারা সিনেমার মাধ্যমে তাদের আন্দোলন জারি রেখেছেন। তাদের এ অদম্য মনোভাবই প্রশংসিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

ইরানের এমন সিনেম্যাটিক বিস্ফোরণ সম্ভব হয়েছে নির্মাতাদের লড়াকু অবস্থানের কারণে, এমনটাই মনে করছেন ভেনিস আন্তর্জাতিক উৎসবের প্রধান আলবারতো বারবেরা।

আলবারতো বারবেরা বলেন, ইরান থেকে যে সিনেমাগুলো এসেছে, গুণে-মানে তার প্রতিটিই ভালো। ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ইরানি রাষ্ট্রক্ষমতা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি রক্ষণশীল ও দমনমূলক।

ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিদ্রোহ তৈরি না হয়, সেজন্য জাফর পানাহির মতো পরিচালককে কিছুদিন আগে কারাগারে বন্দী করেছে ইরান। এর আগেও গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। ২০ বছর লেখালেখি, পরিচালনা—কিছুই করতে পারবেন না, এমন নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছিল। তবুও মাথা নোয়াননি জাফর পানাহি। এবারের ভেনিস উৎসবে তার সিনেমা ‘নো বেয়ার্স’ রয়েছে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে।

এ ব্যাপারে ভেনিস উৎসবের পরিচালক আলবারতো বারবেরা বলছেন, এবার আমরা অন্য এক পানাহিকে দেখব। নো বেয়ারস সিনেমায় আমরা দেখব দুটো সমান্তরাল গল্প, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। আমার মতে, এ সিনেমা পানাহির গত এক দশকের সেরা কাজ।

পানাহির সাথে এখন কারাগারে আছেন আরও দুই বিখ্যাত নির্মাতা মোহাম্মদ রাসুলফ ও মোস্তফা আল আহমেদ। তারা সবসময় স্বাধীনভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছেন সিনেমায়। আরেক নির্মাতা ভাহিদ জালিলভান্দ এর সিনেমা ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়াল’ লড়ছে ভেনিস উৎসবে। নির্মাতা হাউমান সায়েদির ‘ওয়ার্ল্ড ওয়্যার ৩’ রয়েছে উৎসবের হরাইজন বিভাগে।

ইরানি সিনেমা নিয়ে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশ্ন উঠেছে, সিনেমার বিরুদ্ধে ইরানি শাসকদের এ খড়্গহস্ত আর কতোদিন! কতো দিন নির্মাতারা চালিয়ে যাবেন এমন লড়াই? বাধার দেয়াল ডিঙিয়ে ইরানের পরিচালকেরা কি পারবেন বিশ্ব প্লাটফর্মে তাদের সিনেমা নিয়ে আসতে?  

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply