বিকাশে প্রতারণার পর ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি, লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া মা-ছেলের চক্র আটক

|

মা-ছেলে মিলে গড়ে তুলেছে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্র। ফরিদপুরের ভাঙা এলাকার এই চক্র বিকাশে প্রতারণার পর এবার হাত বাড়িয়েছে ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতিতে। ব্যাংক কর্মকর্তা সেজে গ্রাহকদের ফোন করে পিনকোড সংগ্রহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তাদের বাড়িতে মাটি খুঁড়ে মিলেছে বিপুল টাকা। মা-ছেলের গড়া চক্রটিকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।

ছেলে স্পর্শকাতর সব প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা তুলে দেয় মায়ের হাতে দেয়। আর মা সেগুলো নিয়ে জমায়, খরচ করে। পরিবারের সবার মিলেমিশে করা এমন অপরাধের দেখা মিলেছে ফরিদপুরের ভাঙা এলাকা। পুলিশের ভাষায়, ওই এলাকার সবাই বিকাশ প্রতারণায় জড়িত। সেই বিকাশ প্রতারকরা এখন নেমেছে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে। এই চক্রের প্রধান শারফিন। সে বড় বড় চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ীকে ফোন দিয়ে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে নেয় এটিএম কার্ডের নম্বর, পিনকোড এবং ওটিপি। এরপর ওই ভুক্তভোগীরা দেখতে পান, তাদের অ্যাকাউন্টের সব টাকা গায়েব।

এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সোহেল মীর বলেছে, দশজনকে ফোন করলে অনেকেই বলতো, আপনারা তো প্রতারক। ব্যাংক থেকে তো এভাবে ফোন করে না। পরে আমরা সেই ফোনগুলো কেটে দিতাম। যারা বিশ্বাস করতো, তাদের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে নেয়া হতো। কাউকে বিশ্বাস করাতে হতো না। তবে আমরা বলতাম, ব্যাংকের লোক না হলে আপনার যে কার্ড আছে তা তো জানতাম না।

এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে অপর অভিযুক্ত নাজমুল বলেছে, সোহেল ভাই ও আমি ফোন করতাম। বলতাম, আপনার কার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। কার্ডটি চালু করতে হলে কার্ড নাম্বারটা বলতে হবে।

অভিযুক্ত নাজমুলের মা ও চক্রের সহযোগী পারুলী আক্তার বলেন, আমার ছেলে টাকা এনে আমার হাতে দিতো। সেই টাকা আমি ঘরে লুকিয়ে রাখতাম।

সম্প্রতি প্রতারিত বেশ কয়েকজন মামলা করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন থানায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন বড় বড় কোম্পানির কর্মকর্তারা। মামলার এক বাদী জানান, তাকে ফোন করে বলা হয় তার কার্ড আটকে গেছে। তাই কার্ড উদ্ধার করতে কিছু তথ্য লাগবে। পরবর্তীতে দেখা যায়, অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে।

মামলায় তদন্তের পর সোহেল, নাজমুল, তারা মিয়া ও পারুলীকে গ্রেফতার করেছে ডিবির গুলশান বিভাগের টিম। ফরিদপুরে এদের এলাকায় বাড়ির পাশের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় লাখ লাখ টাকা। পাওয়া যায় প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলোও।

ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিবি) মশিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা দেখে আসছি, বাবা-মা তাদের সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। যাতে সন্তান মাদকাসক্ত, চোর কিংবা প্রতারক না হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখলাম, এই মা ও তার মতো আরও অনেক মা তাদের সন্তানদের প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার শিক্ষা দেন। এদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন।

পুলিশ বলছে, এমন প্রতারণা সম্ভব শুধু গ্রাহকদের অসচেতনতায়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও তাদের। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীর সাথে প্রতারণা করতে গেলে প্রতারকের যে কয়েকটি ধাপ দরকার, কোনো ধাপেই যেন ব্যবহারকারীরা তাদের সহায়তা না করে। তারা বলবে, ঠিক আছে, আপনি বললেন, আমি শুনলাম। এখন ব্যাংকে গিয়ে সব ঠিক করে নেবো। তাহলেই দেখা যাবে, কার্ড ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে পারবে।

আরও পড়ুন: তিন মাসেও বিমানবন্দরে হারানো লাগেজ ফেরত পাননি প্রবাসীরা, মনিটরিং চলছে দাবি কর্তৃপক্ষের

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply