সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
জন্মের সময় মাকে হারায় আয়েশা। বয়স যখন আটদিন তখন আয়েশাকেও চলে যেতো হলো না ফেরার দেশে। তবে অভিযোগ রয়েছে, আয়েশা মারা গেলো বিনা চিকিৎসায়, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে। কোনোভাবেই যেন নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারছে না স্বজন হারানো এই পরিবারটি। সাতক্ষীরা শহরের ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল লিমিটেডে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে মারা যায় এ শিশুটি।
শিশুটির স্বজনরা বলছেন, মৃত্যুর পর ছাড়পত্র দিয়ে অবস্থা গুরুতর বলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মা রেশমা খাতুনের গর্ভ থেকে শিশু আয়েশা খাতুন পৃথিবীর আলো দেখে গেল ১৬ সেপ্টম্বর রাত একটায়। সাতক্ষীরার ধানদিয়া ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামে নানা সালাউদ্দীন সরদারের বাড়িতে শুধু হয় আনন্দ। তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন মা রেশমা খাতুন। ওই রাতেই রেশমাকে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রেশমা। সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল শিশু আয়েশা। নানা বাড়িতেই বেড়ে উঠছিল শিশুটি।
শিশুটির মামা রাসেল সরদার জানান, মায়ের মৃত্যুর পর আমরা আয়েশার দেখভাল করছিলাম। হাসি খুশি ও সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। শনিবার একটু অসুস্থবোধ করছিলো। তখন একজনের পরামর্শে নেওয়া হয় সাতক্ষীরা ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলে শিশুটির রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। তিনদিন রক্ত দিতে হবে। ভর্তির সময় আমি বলেছি, যদি আপনারা ভালো চিকিৎসা দিতে না পারেন তবে বলে দিন, আমরা খুলনায় নিয়ে যাবো। কর্তৃপক্ষ জানায়, ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে এখানে, অসুবিধা নেই। এরপর বিকেল ৫টার দিকে সেখানে ভর্তি করি।
রাসেল সরদার আরও জানান, ভর্তির পর কোনো নার্স-চিকিৎসক আসেনি। আমি রক্ত রেডি করে বসে ছিলাম। কিন্তু শিশুর গায়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি হাসপাতালের কেউ। ডাকাডাকি করলেও পাশে কেউ আসেনি। এমনকি শিশুর হাতে ক্যানোলা পরানোর মতো কোনো ডাক্তার বা নার্সও তাদের ছিল না। পরবর্তীতে আমি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে ক্যানোলা লাগিয়ে আনি। তখনও ক্লিনিকের কেউ পাশে আসেনি। রাত ১০টার দিকে আয়েশা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে। তখন আমি চিৎকার শুরু করি। এ সময় ক্লিনিকে থাকা অন্য রোগীর স্বজনরা পাশে আসেন। এরপর তড়িঘড়ি করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। ছাড়পত্র দিয়ে বলে বাচ্চার অবস্থা গুরুতর খুলনায় নিয়ে যান। ততক্ষণে আয়েশা মারা গেছে।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করে রাসেল বলেন, জন্মের সময় মাকে হারানোর পর এখানে বিনা চিকিৎসা অবহেলায় মারা গেল। শিশুটিকে তারা হত্যা করেছে। আমি এদের সবার বিচার চাই। যেন এমন ঘটনা আর কারও ভাগ্যে না ঘটে।
আয়েশার বাবা দিনমজুর আনারুল গাজী। কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সরসকাটি গ্রামের ক্ষেত্রপাড়ার বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী ও সদ্যজাত সন্তান হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন এই কৃষক।
এসব ঘটনার বিষয়ে সাতক্ষীরা ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালের এডমিন আনোয়ার হোসেন বলেন, বাচ্চাটাকে বাসায় চিকিৎসা করাচ্ছিল, সে কারণে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর আমাদের এখানে নিয়ে আসলে চিকিৎসা শুরু হয়। তবে ক্যানোলা করতে গিয়ে করতে পারেনি। পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল থেকে ক্যানোলা করে নিয়ে আসে। ফাইলটা সেখানে রেখে আসায় চিকিৎসা দিতে দেরি হয়। তখন আরও খারাপ অবস্থা হয়। পরবর্তীতে বাচ্চাকে তারা নিয়ে চলে যায়। আমাদের এখানে কোনো বাচ্চা মারা যায়নি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন সাফায়ত বলেন, ঘটনাটির বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। তবে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কেউ অভিযোগ দেয় তবে ইসলামী হাসপাতালে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটির তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেডআই/
Leave a reply