২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমির খানের ‘গাজিনি’ ১০০ কোটি রুপি আয় করা বলিউডের প্রথম সিনেমা। ভারতের বক্স অফিস হিসেবই পাল্টে দিয়েছিল তামিল সিনেমার এ হিন্দি রিমেক। বলিউডে অন্য ভাষা থেকে রিমেক নির্মিত হয়ে আসছে নিয়মিতভাবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে রিমেক সিনেমা। ২০২২ সালে একের পর এক হিন্দি রিমেক সিনেমা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
টানা এক দশকের বেশী সময় বক্স অফিসে ব্যর্থতার পর ২০০৯ সালের ‘ওয়ান্টেড’ সিনেমাটি সালমান খানের পুনর্জন্মের সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তেলুগু সিনেমার হিন্দি রিমেক ছিল সেটি। এরপর এক যুগের বেশী সময় ধরে বলিউড রাজত্ব করা সালমানের বেশীরভাগ সিনেমাই অন্য ভাষার রিমেক।
শুধু সালমানই নন, রিমেক সিনেমার মাধ্যমে সাফল্য পাওয়া তারকাদের মধ্যে রয়েছেন অক্ষয়, অজয়, শাহীদ কাপুর, রণবীর সিং প্রমুখ। এই তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রিমেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অক্ষয়। অন্যদিকে অজয় দেবগণের আইকনিক চরিত্র ‘সিঙ্ঘাম’ ও একটি হিট তামিল সিনেমার রিমেক। এছাড়া আলোচিত ‘দৃশ্যাম’ সিনেমাও রিমেক সিনেমা।
তবে, চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের সিনেমাগুলোর বক্স অফিস ব্যর্থতা সংশ্লিষ্টদের নতুন সমীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে বক্স অফিসে ব্যর্থ রিমেক সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাচ্চান পাণ্ডে’, ‘জার্সি’, লাল সিং চাড্ডা’ এবং সবশেষ ‘ভিক্রম ভেদা’। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সিনেমাগুলোর ব্যর্থতা কি শুধুমাত্র রিমেকের কারণে?
বলিউড বিশ্লেষক ও পরিচালক রামেশ সিপ্পি বলছেন, কয়েক যুগ আগেও কিছু সিনেমা ভালো ব্যবসা করেছে দেখে, এ যুগেও যে কাজ করবে তা কিন্তু না। এই সম্ভাবনা মাত্র ১০ শতাংশ। জিতেন্দ্র-শ্রীদেবীর সুপারহিট হিম্মতওয়ালার কথাই ধরা যাক। সাজিদ খানের রিমেক একদম যাচ্ছেতাই। আবার ডেভিড ধাওয়ানের ‘জুড়ওয়া’ কিন্তু এ যুগেও বক্স অফিস হিট দিয়েছে।
রামেশ সিপ্পির কথা ধরলে, রিমেক সিনেমা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে বড় কারণ শুধুই পরিচালক। কোনোভাবেই সিনেমা নয়। এদিকে করোনা মহামারীতে দর্শকরা ওটিটি প্লাটফর্মে ঝোঁকার ফলে রিমেক সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে ক্রমাগতভাবে।
ভারতের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ বলছেন, দক্ষিণী সিনেমাগুলো নিজেদের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, কন্নড় নির্মাতারা নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে সিনেমা বানান। কিন্তু হিন্দি সিনেমার কোনো শেকড় নেই। শুধু লার্জার দ্যান লাইফ সিনেমা বানালেই যে তা ভালো চলবে, এমন কোনো কথা নেই।
বলিউডে রিমেক সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা হারানোর আরেকটি কারণ, ভারতের আঞ্চলিক সিনেমাগুলোর হিন্দিতে মুক্তি। রাজামৌলী পরিচালিত ‘বাহুবলী’ সিরিজ, ‘পুষ্পা’ এবং ‘কেজিএফ’ সিরিজের পর দক্ষিণের সিনেমাগুলোর প্যান ইন্ডিয়া মুক্তি নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় বলিউডের দর্শকদের কাছে সিনেমার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার বিষয়টি অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
চলতি বছরই বলিউডে মুক্তি পেতে যাচ্ছে অজয় দেবগনের ‘দৃশ্যাম টু’, সালমান খানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’, অক্ষয় কুমারের ‘সরুরাই পত্রু’ সহ আরও বেশ কিছু সিনেমা, যার প্রায় সবগুলোই রিমেক। মুক্তির পর এই সিনেমাগুলোর ভাগ্য কি হয় তা সময়ই বলে দিবে।
/এসএইচ
Leave a reply