মাত্র ৪৫ দিন দায়িত্ব পালন করেই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এক সপ্তাহের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন তিনি।
তার সরকারের দু’জন মন্ত্রী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন, এক ডজনেরও বেশি এমপি প্রকাশ্যেই তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তার পদত্যাগ দাবি করছিলেন।এ প্রেক্ষাপটেই বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) লন্ডনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের কথা জানান লিজ ট্রাস।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যে ম্যানডেটের ভিত্তিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই ম্যানডেট তিনি পূরণ করতে অপারগ। তাই তিনি রাজা তৃতীয় চার্লসকে তার পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে কনসারভেটিভ পার্টি তার উত্তরসূরিকে বেছে না নেয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে লিজ ট্রাস হচ্ছেন সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাত্র ৪৫ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টিতে তার উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য আবার ভোটাভুটি হবে। ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের একটি বিশেষ কমিটির প্রধান জানিয়েছেন আগামী শুক্রবারেই নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ফল জানা যাবে। তবে বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টার্মার অবিলম্বে নতুন সাধারণ নির্বাচন দাবি করেছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিও নতুন নির্বাচন দাবি করেছে।
যেসব কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন লিজ ট্রাস
লিজ ট্রাসের পদত্যাগের প্রধান দুটি কারণ উল্লেখ্য করেছে বিবিসি। প্রথমত লিজ ট্রাসের ঘোষিত অর্থনৈতিক কর্মসূচির ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয়ত তার নিজ দলের এমপির মধ্যে আস্থা ও সমর্থন হারানো।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়ই লিজ ট্রাস বলেছিলেন, তিনি নিম্ন কর হার এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির ব্রিটেন গড়ে তুলবেন। তার প্রথম অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কাওয়ারতেংকে যে মিনি বাজেট দেন তাতে টালমাটাল হয়ে যায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি।
এ বাজেট ঘোষিত হবার পরপরই তা অর্থখাতে নজিরবিহীন সংকট সৃষ্টি করে।ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দর পড়ে যায়, তার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া- এসব যুক্ত হয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির সংকট মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যে গুরুতর চেহারা নেয়।
এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে গত সপ্তাহে কাওয়াসি কাওয়ারতেংকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন লিজ ট্রাস। এরপর নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন জেরেমি হান্ট। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ট্রাস-কাওয়াসির অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। কিন্তু পরিকল্পনা বাতিল করলেও যে ক্ষতি লিজ ট্রাস করে ফেলেন সেটি আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। লিজ ট্রাসের নিজ দলের বেশ কয়েকজন সদস্য প্রকাশ্যে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। এরপর বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান পদত্যাগ করলে ট্রাসের পদত্যাগ ত্বরান্বিত হয়।
লিজ ট্রাস রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলের শেষ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাকে নিয়োগ দেয়ার দু’দিন পরই এলিজাবেথ মারা যান। সদ্যই সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়া লিজ ট্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে অর্থনীতিবিদ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি শেল এবং ক্যাবল ওয়্যারসে চাকরি করেন। তিনি ২০০০ সালে হিসাবরক্ষক হিউগ ও’লেরিকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার পরিবার বাস করেন নরফোকের থেটফোর্ডে।
ইউএইচ/
Leave a reply