বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে সর্বশান্ত, টাকা ফেরত পেতে থানা-আদালতের বারান্দায় ভুক্তভোগীরা

|

কেউ দিয়েছেন ৫৩ লাখ, কেউ বা ৪০! কেউ বিক্রি করেছেন বসতভিটা; কেউবা বন্ধক রেখেছেন ব্যাংকের কাছে। স্বপ্ন ছিল, ইউরোপ গিয়ে স্বচ্ছলতা ফেরাবেন পরিবারে। কিন্তু, প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সবাই এখন সর্বশান্ত। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে, এখন ফোনও ধরছে না প্রতারক। টাকা ফেরত পেতে আদালত আর থানার বারান্দায় ঘুরছে ভুক্তভোগীরা।

২ বছর আগেও যে পরিবারটি ছিল দুধে-ভাতে। এখন তাদের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বাধ্য হয়েই বন্ধ করেছেন মেয়েদের লেখাপড়া।

ভুক্তভোগী মফিজ আহমেদ জানান, আমার রোমানিয়ায় যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ইতালি নিয়ে যাবে বলে মোট ৯ লাখ টাকা নেয়।

দুবছর আগে, ইতালি যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি আর বসতভিটা ব্যাংকে বন্ধক রাখেন মফিজ আহমেদ। সেই টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দিলেও ইতালি যাওয়া হয়নি তার। উল্টো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার দায়ে তার বসত বাড়িই এখন নিলামে তুলছে ব্যাংক কতৃপক্ষ।

মফিজ আহমেদের মতো আরেক ভুক্তভোগী আশরাফুল হক। প্রতারকের মিষ্টি কথার ফাঁদে পড়েছেন তিনিও। চাকরি আর ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভনে নিজের এবং বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের কাছ থেকে এনে দেন ৫৩ লাখ টাকা।

বেশ কয়েক বছর কেটে গেলেও চাকরি বা বিদেশ পাঠায়নি প্রতারক। ফলে আত্মীয় স্বজনদের রোষানলে পড়েন আশরাফুল। এক পর্যায়ে নিজের বসতভিটা লিখে দেন তাদের।এখন তিনি কাটাচ্ছেন যাযাবর জীবন।

শুধু মফিজ আর আশরাফুলেই থেমে থাকেনি এ প্রতারক। নিঃস্ব করে পথে বসিয়েছেন আরও অনেককে।

ব্যাংকার বাবার সন্তান প্রতারক রাশেদ রহমান। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চতুর প্রকৃতির। সবার কাছে নিজেকে পরিচয় দিতেন ব্রিটিশ অ্যাম্বাসির কর্মকর্তা হিসেবে। প্রচার করতেন সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে সখ্যের কথা। বিয়ের পরে তার প্রতারণার সঙ্গী হন স্ত্রী শামিমা ইয়াসমিন। জড়িয়ে পড়েন শশুর বাড়ির লোকজনও।

প্রতারক রাশেদ দম্পত্তির খোঁজে খিলগাও নন্দিপাড়ায় তার শশুর বাড়িতে যান ভুক্তভোগীরা। তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন রাশেদের শশুর।

মেয়ে ও মেয়ের জামাই পাশের একটি ফ্ল্যাটে থাকলেও শুরুতে তা গোপন করেন তারা। পরে বাসার ঠিকানা দিলেও সেখানে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। পরে জানা যায়, সকালে তড়িঘড়ি করে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তারা। অভিযোগের বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে সবকিছু মিথ্যা বলে দাবি করেন রাশেদ।

অভিযুক্ত প্রতারক রাশেদ রহমান বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য কয়েকজন লোক আমার পিছে লেগেছে। এগুলো বানোয়াট। আমি টাকা নিয়েছি অন্য ব্যবসার কারণে।

পুলিশ বলছে, মানুষের অসচেতনতা আর আইনী দীর্ঘ সূত্রিতার কারণেই দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব প্রতারক চক্র।

মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, যেহেতু এই সমস্যাগুলো দিন দিন বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের উদ্ধারের জন্য যদি আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয় তাহলে তারা দ্রুততম সময়ে তাদের সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবে।

প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও চেক জালিয়াতির অসংখ্য মামলা রয়েছে রাশেদের বিরুদ্ধে। দেশত্যাগে আছে আদালতের নিষেধাজ্ঞা। একাধিক বার পুলিশ, র্যাবের হাতে আটক হলেও এক টাকাও ফেরত দেননি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে। উল্টো প্রতিনিয়ত দিচ্ছেন হত্যার হুমকি।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply