সিলেট ব্যুরো
আবারো ধৃষ্টতা দেখালেন হাওর দুর্নীতি মামলার আলোচিত আসামি আব্দুল হান্নান। বৃহস্পতিবার সকালে কড়া নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্রবেশ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে ছবি তোলেন তিনি। তার এমন ঔদ্ধত্যে একই সাথে বিস্মিত ও বিব্রত সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা। আর সচেতন নাগরিকরা বলছেন, বড় একটি দুর্নীতি মামলায় একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি এভাবে বেপরোয়া হয়, তা তদন্তকাজে প্রভাব ফেলতে পারে।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাত্রা বিরতির জন্য নামেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তার যাত্রা বিরতি উপলক্ষে বিমান বন্দরসহ গোটা সিলেট নগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কিন্তু সবার চোখে ধুলো দিয়ে বিমান বন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেন সুনামগঞ্জের হাওর দুর্নীতি মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল হান্নান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে রাষ্ট্রপতির এক ফটো সেশনে তাকেও দেখা যায়।
এক ছবিতে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতির সাথে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল ইসলাম, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ও যুবলীগ নেতা সৈয়দ শামীম এবং তার পাশে আব্দুল হানান। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পরই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সচেতন নাগরিকদের মনে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী যমুনা টেলিভিশনকে জানান, রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার অনুমতি ছিল মাত্র ৫ জন নেতার। কিভাবে সে সেখানে গেলো তা তার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত তিনি। সেই সাথে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
বিমান বন্দরে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ছবিতে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনেরই পাশ ছিল না। তাদের ভিতরে আনতে সহায়তা করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিনিও বিব্রত বোধ করেছেন।
এ ঘটনাকে গুরুতর অপরাধ বলছেন সিলেটের সচেতন নাগরিকরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সে বড় বড় নেতার সাথে সখ্যতা দেখানোর জন্য ছবি তোলে, সবশেষ রাষ্ট্রপতির সাথেও ছবি তোলার সাহস দেখিয়েছে। এটা তার ধৃষ্টতা। এসব করে সে দুর্নীতি মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, বিমান বন্দরে আওয়ামী লীগের যে সকল নেতারা ছিলেন এটা তাদেরও দায়িত্ব। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে কে ছবি তুলবে কে তুলবেন না এটা নেতাদেরই নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল। নেতারা এখানে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
কীভাবে বিমান বন্দরে প্রবেশ করলেন সেই প্রশ্নে আব্দুল হান্নান বলেন, আমি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবেই অন্যান্য নেতাদের সাথে প্রবেশ করেছি কোন পাস লাগেনি, কেউ আমাকে বাধাও দেয়নি।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি পাস পেয়েছিলেন কিন্তু নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ন কাজ থাকায় তিনি বিমান বন্দরে যেতে পারেননি। আব্দুল হান্নান আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের নেতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার জানামতে সে কোন কমিটির সদস্য না। সে কীভাবে বিমান বন্দরে প্রবেশ করলো তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে দলের নেতাদের সাথেও কথা বলবেন তিনি।
গত বছরের বোরো মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানি হয়। জেলার ১৫৪টি হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। এতে আবাদ হওয়া ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ধানের ৯০ ভাগ ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়। জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলহানির পরই ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মে অভিযোগ উঠলে দুদকের তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির প্রমাণ পায়।
গত বছরের ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা, বাঁধ নির্মাণকাজের ৪৬ জন ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযুক্ত ঠিকাদারদের সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান অন্যতম। পলাতক থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সাথে ভারতে যান আব্দুল হান্নান। এ নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়েন এই আওয়ামী লীগ নেতা। যদিও সেই মামলায় এখন জামিনে আছেন আব্দুল হান্নান।
Leave a reply