নানা সংকটে অভ্যন্তরীণ বিমান ব্যবসা

|

আব্দুল্লাহ্ তুহিন:

নানা সমস্যায় অভ্যন্তরীণ রুটের আকাশ যাত্রা। মহামরারি ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জেট ফুয়েলের উচ্চ মূল্য আর যাত্রী সংকটে হোঁচট খাচ্ছে এভিয়েশন ব্যবসা। এরইমধ্যে বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে সরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান। আর সিভিল এভিয়েশনের বৈষম্যের কারণে হুমকির মুখে বেসরকারি সংস্থাগুলোও।

উল্লেখ্য, দেশে যখন যাত্রীর চাপ বাড়ছিল, ঠিক তখনই এয়ারলাইন্সগুলোতে বড় ধরনের ধাক্কা দেয় করোনা মহামারি। এরপর জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে।

সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসেন জানান, বিশ্বে বাজারে তেলের দাম বাড়লে উন্নত দেশগুলো যে অনুপাতে দাম বাড়ায়, পরে তেলের দাম কমে গেলে সে অনুপাতে কমিয়ে আনে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশে ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু বিশ্ব বাজারে যখন কমলো, দেশে তখন সেটি মাত্র ০.২ শতাংশ কমানো হয়। এই খাতটি (এভিয়েশন) বৃদ্ধি করার জন্য আমরা মানসিকভাবে তৈরি হয়নি।

নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ডলারের অবমূল্যায়ন ও তেলের আকাশচুম্বী মূল্য- সবকিছু মিলিয়ে আমরা শঙ্কা দেখতে পাচ্ছি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামবে বা বিশ্ব পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতি হওয়ার লক্ষণ নেই। এই বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খারাপ অবস্থার শঙ্কা করছি।

সরকারিভাবে উড়োজাহাজে তেল সরবরাহ করে পদ্মা অয়েল। তারা বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছে যে দামে তেল বিক্রি করে, দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে নেয় তার চেয়েও বেশি। এই বৈষম্য বেসরকারি খাতের টিকে থাকার জন্য কঠিন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মফিজুর রহমান বলেন, আমরা দেখেছি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের যে দাম, বাংলাদেশে সবসময় সেটি আমাদের কিনতে হচ্ছে ২৫-৪০ শতাংশ বেশি টাকা দিয়ে। এমনকি ৫০ শতাংশ বেশি টাকা দিয়েও ক্রয় করতে হয়েছে। গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসের পরিসংখ্যান যদি দিই, এই দুই মাসে আন্তর্জাতিক ইনডেক্সের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি টাকা দিয়ে তেল কিনেছি। এটা তো কোনো যুক্তি হতে পারে না। আমাদের আন্তর্জাতিক ইনডেক্স মেনে চলতে হবে।

এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসেন বলেন, বাইরের বিনিয়োগকারীরা এখানে ফ্যাক্টরি দিয়েছে। তারা এখন এসে হেলিকপ্টারে করে চলে যায়। যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন যখন ভালো হবে, তখন অর্থনীতি ভালো হবে। কিন্তু সেদিকে যদি খেয়াল না দিই, তেলের দাম বাড়িয়ে রাখি, তাহলে তারা অপারেট করবে কীভাবে?

রাষ্ট্রীয় বিমানের সাথে ভাড়ার অবাস্তব পার্থক্য প্রতিযোগিতার শুরুতেই পিছিয়ে দিচ্ছে বেসরকারি এয়ারলান্সগুলোকে। এজন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালার দাবি জানালেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলেনি।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটের ভাড়া সব এয়ারলাইন্সে সমান থাকতে হবে। ওরা যে এত টাকা বিনিয়োগ করতেছে, লস খাচ্ছে! এই টাকা তো নষ্ট হচ্ছে। এয়ারক্রাফট কিনে আনতেছে তারা, ফরেন কারেন্সি নষ্ট হচ্ছে। এটি কেন করা হচ্ছে? ঠুনকো লাভ দেখানোর জন্য মাঝে মধ্যে বাস ভাড়ার সমান ভাড়া নামিয়ে আনে বিমান। এটা করতে পারে না। বাস আর বিমান দুইটা ভিন্ন জিনিস।

মফিজুর রহমান বলেন, ভাড়া কমিয়ে লস করে নাকি ভাড়া সমন্বয় করে ফ্লাইট পরিচালনা করবো, এয়ারলাইন্সের জন্য বিরাট প্রশ্ন।

এর মাঝে পদ্মা ও কালনা সেতু চালুর পর যশোর ও বরিশাল রুটে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো।

প্রসঙ্গত, আকাশ পথে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করে ১৯৯৭ সালে। কাঙ্ক্ষিত লাভ না পেয়ে গেলো ২৪ বছরে বন্ধ হয়েছে এয়ার পারাবাত, জিএমজি, রিজেন্ট, ইউনাইটেডসহ ৮টি এয়ারলাইন্স। যার মধ্যে বর্তমানে টিকে আছে ইউএস বাংলা ও নভো এয়ার।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply