ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে ৪ মাদরাসা শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

|

ভূক্তভোগী চার শিক্ষার্থী।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, নরসিংদী:

ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ৪ মাদরাসা শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাদা কাগজে সই করে পুলিশের হাত থেকে ওই শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ভুক্তভোগী এ চার শিক্ষার্থী জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে মাদরাসায় ছাড়পত্র আনতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আমরা চার বন্ধু মাদরাসা থেকে ছাড়পত্র আনতে মাদরাসা সুপার জয়নুল আবেদীন স্যারের অফিসরুমে যাই। এ সময় তিনি ছাড়পত্র তৈরি করতে সময় লাগবে জানিয়ে তিনি আমাদের বাইরে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। আমরা অপেক্ষার পর আবারও তার অফিসে যাই। এ সময় সুপারের সেখানে এসআই আলীম হোসেনের নেতৃত্বে ৫-৬ জন পুলিশ সদস্য আমাদের মারধর করেন। তখন মাদরাসা সুপারসহ আরও তিন জন সহকারী শিক্ষক সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মারধরের সময় এসআই আলীম আমাদের বলেন- মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আর লিখবো কি না? এ সময় তিনি আমাদের গালিগালাজও করেন। পরে পুলিশ আমাদের কাজিরকান্দি ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এবারের দাখিল পরীক্ষায় আমাদের মাদরাসা থেকে আমরা ৪৯ জন অংশগ্রহণ করি। এরমধ্যে ২২ জন ফেল করেছে। সম্প্রতি, নিয়মিত ক্লাসে না আসা শিক্ষকদের সমালোচনা করে ফেসবুকে কে বা কারা পোস্ট দিয়েছে, কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলে আমাদেরকে মারধর করা হয়েছে। অথচ আমরা এসবের কিছুই জানি না।

এ প্রসঙ্গে আলোকবালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাদা কাগজে সই করে ওই চার শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে এনেছি। তবে কী অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে পুলিশ সে ব্যাপারে আমাকে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ বলেন, এলাকা থেকে কয়েকজন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি এসআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এসআই আমাকে জানিয়েছেন- ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু, অভিযোগের কোনো সত্যতা মেলেনি। এ সময়, শিক্ষকের ইন্ধনে পুলিশ যা ঘটিয়েছে তা অযৌক্তিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মাদরাসা সুপার জয়নুল আবেদীন বলেন, শিক্ষার্থীরা ছাড়পত্র নিতে আমার কাছে এসেছিল। অপেক্ষা করতে বললে তারা বের হয়ে যায়।

ফেসবুক পোস্টের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ইভটিজিংয়ের অভিযোগে পুলিশ শিক্ষার্থীদের আটক করেছে। পুলিশ যেন তাদের মারধর না করে এজন্য আমরা প্রতিবাদ করেছি।

এ বিষয়ে নরসিংদী সদর থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, সেখানে পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। এর আগেও, এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ওঠেছিল। তারা কেউ মাদরাসার বর্তমান শিক্ষার্থী নয়। মাদরাসা প্রধান ফোন করলে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে ওই মাদ্রাসায় যায়।

ওসি আরও বলেন, যদি সেখানে কাউকে অযথা মারধর করা হয়, তাহলে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসআই আলিম শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেখানে ইভটিজিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মাদরাসা প্রধানের ফোন পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। আমরা তাদের সম্পর্কে খারাপ কিছু পাইনি এবং সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে নরসিংদী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। শিক্ষার্থীরা যদি ফেসবুকে লিখেও থাকে, তাহলে শিক্ষকরা শাসন করতে পারেন। কিন্তু, পুলিশ দিয়ে মারধরের কোনো তথ্য পেলে অবশ্যই জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply