২০৪১ সালে আমরা হবো স্মার্ট জাতি: প্রধানমন্ত্রী

|

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর:

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ তথ্য জ্ঞান সম্পন্ন একটি জাতি। যে জাতি হবে স্মার্ট জাতি। আমাদের সরকার, আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় গাজীপুরের মৌচাকে বাংলাদেশের স্কাউট আয়োজিত ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালীন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদদের প্রতি, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে ঘাতকের বুলেটে নিহত শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত শিশু কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, আমি যখন তোমাদের মাঝে আসি, তখনই আমার মনে পড়ে আমার ছোট্ট শিশু ভাইটিকে মাত্র ১০ বছর বয়সে ঘাতকের নির্মম বুলেট আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে। তোমাদের মাঝে খুঁজে ফিরি আমার ছোট্ট ভাই শেখ রাসেলকে। আমি চাই আমাদের দেশের শিশুদের জীবন সুন্দর ও নিরাপদ হোক। কারণ আজকের শিশু কিশোররাই আগামীদিনের জাগরণ, তারা বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। তাই আমি চাই আমাদের শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক।

তিনি আরও বলেন, আজকের যে বাংলাদেশ ২০২২ সালে এসে আমরা দেখছি তা কিন্তু এরকম ছিল না, প্রতিনিয়ত সংঘাত, খুনাখুনি, অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা, নির্বাচন নিয়ে খেলা, নানা ঘাত প্রতিঘাত আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজেই আমি চাই আমাদের দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এদের কোনো স্থান থাকবে না। সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের শিশু বাংলাদেশে যারা বড় হবে তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গঠন করার কাজ করবে। কাজেই স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, আর তরুণদের মধ্যে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল গুণাবলি বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলছে। পরোপকারী হিসেবে সমাজ সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেটা আমরা দেখছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা কোভিডকালীন বিভিন্ন সময়ে স্কাউটদের সেই আন্তরিকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। তাই আমি চাই স্কাউট আরও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠুক।

দেশের স্কাউটকে শক্তিশালী করতে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্কাউট আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউট সম্প্রসারণে স্কাউট শতাব্দী ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালমাই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণে চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব দল গঠন এবং কাব স্কাউট প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকে ৯ একর ভূমি বরাদ্দ দিয়েছি। তবে এ ভূমিতে বনায়ন ঠিক রাখতে হবে। তবে এ ভূমিতে বনায়ন ধ্বংস করা যাবে না, বেশি স্থাপনা করা যাবে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার যতটুকু করার তা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। এনিমেশন স্টুডিও নির্মাণ করা হয়েছে, আধুনিক সুইমিং নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের রোভার স্কাউটের জন্য একটি অ্যাডভেঞ্চার ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি এবং দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করে দিবো। আমাদের লক্ষ্য দেশের স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু কিশোর ও যুবদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক গড়ে তোলা। আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুটি করে কাব স্কাউট ও রোভার স্কাউট দল খোলার নির্দেশ দিয়েছি এবং মাদরাসা সমূহেও যাতে স্কাউট দল গঠন করা হয় সেবিষয়ে কাজ করতে হবে সকলকে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি, ব্রডব্যান্ড লাইন আমরা সমস্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে বিভিন্ন প্রযুক্তির শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টস রোবোটিক, ন্যানোটেকনোলজি এসকল বিষয়ে যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। জিডিটাল ডিভাইস যাতে ব্যবহার করতে পারে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারে সেজন্য কম্পিউটার ল্যাব প্রতিটা স্কুলে করে দিচ্ছি। তাছাড়া ইকোপার্ক, হাইটেক পার্ক ইনকিউবেশন সেন্টার বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় করে দিয়েছি, যাতে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে আরও প্রশিক্ষণ নিতে পারে এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে আমরা আলোকিত করে দিয়েছি। দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে। বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply