ইবিতে রাতভর শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

|

ফাইল ছবি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী কর্তৃক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও অশ্লীল ভিডিও ধারণের অভিযোগে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১১ টায় ইবি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

এর আগে, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রী মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল হক।

সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর অভিযুক্ত তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের।

সোমবার রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এ জন্য তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তোলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে তাবাসসুমকে না জানানোয় চটে যান তিনি। এরপর তাকে হলের কক্ষে প্রজাপতি-২ এ দেখা করতে বলেন। তবে অসুস্থ থাকায় দেখা করেননি তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাসে গেলে তাকে বকাঝকা করেন তাবাসসুম।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, এ ঘটনার জেরে ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে হলের গণরুমে (দোয়েল) তাকে ডেকে নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী। সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি দল তাকে দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নানাভাবে নির্যাতন করেন। তিনি বলেন, আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিচ্ছিল আর এর ফাঁকে ফাঁকে চালাচ্ছিল শারীরিক নির্যাতন। কিল, ঘুষি, থাপ্পড় কোনোটাই বাদ রাখেনি।

ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করেন, নির্যাতনের সময় আরেক ছাত্রী মুঠোফোন দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তারা কোনো কথা শোনেননি। গণরুমে এ সময় উপস্থিত সাধারণ ছাত্রীরাও কোনো কথা বলেননি।

ভুক্তভোগী ছাত্রী আরও বলেন, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের সময় হুমকি দেয়া হয়। বলা হয়, এই কথা কাউকে জানালে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হবে। এমনকি প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় লিখে দিয়ে তাকে বলেছেন হাসবি আর এগুলা বলবি। সব তারা ভিডিও করে রেখেছে। বলেন, আপুরা মারার সময় বলছিল মুখে মারিস না, গায়ে মার যেনো কাউকে দেখাতে না পারে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী পাল্টা প্রশ্ন করেন ওই মেয়ে কি কোনো অভিযোগ দিয়েছে? প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে? এরপর তিনি দাবি করেন, অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। ওই মেয়ে মিথ্যা বলছে। হয়তো এক কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি উপাচার্যের কাছে এসেছি। ওই মেয়ে যে মিথ্যুক, তার প্রমাণ উপাচার্যকে দেয়া হচ্ছে।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply