ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় চরম মানবিক বিপর্যয়ে লাখ লাখ মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত খাবার, সুপেয় পানি বা চিকিৎসা সেবা। তার ওপর, নতুনভাবে কম্পনের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ঘর হারানো মানুষেরা। এ পরিস্থিতিতে, দু’দেশের স্বাস্থ্যসেবায় ৮৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি জরুরি সহায়তার আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। দক্ষ জনবল আর তহবিল বাড়াতে তাগিদ দিচ্ছে জাতিসংঘও। খবর রয়টার্সের।
মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল। এরমাঝেই চলছে সাধারণ জীবনে ফেরার চেষ্টা। লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে, অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা। সেখানে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপে খাবারের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেও; বাদবাকি অবস্থা নড়বড়ে।
আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া এক সিরিয়ান বললেন, কোনো বাড়ির ছাদের নীচেই আমরা আর নিরাপদ নই। প্রথম দফা ভূমিকম্পে বাড়ি ধসে পড়েছে। সেখান থেকে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। দ্বিতীয়দফার কম্পনে সেখান থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পে থাকছি। এখানেও পয়ঃনিষ্কাশন বা চিকিৎসার চরম অভাব।
দীর্ঘদিনের সিরিয়া যুদ্ধেও বোমা হামলার এতোটা ভয়ে ছিলাম না। এখন প্রতি মুহুর্তে মনে হয়, মাথার উপর দেয়াল বা ছাদ ভেঙ্গে পড়বে। ছুটে বেড়াচ্ছি; কোথাও মিলছে না নিরাপদ আশ্রয়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে।
এদিকে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নতুবা, চরম মানবিক বিপর্যয় দেখতে হবে- এমন সতর্কবার্তা সংস্থাগুলোর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসুস বলেন, তুরস্কে ১৫টি হাসপাতাল পুরোপুরি ধসে পড়েছে। অগণিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিরিয়ায় গুড়িয়ে গেছে অন্তত ৭টি হাসপাতাল; ১৪৫টির মতো চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র ক্ষয়ক্ষতির শিকার। সীমান্তের দু’পাশে দুই কোটি ৬০ লাখ বাসিন্দা দুর্যোগের শিকার। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি জরুরি তহবিল দরকার।
আর জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিচ বললেন, তুরস্কে উদ্ধার-চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছেন জাতিসংঘের ৫৬৩ জন কর্মকর্তা। সিরিয়ায় এ সংখ্যাটি ৮৬৫। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দু’দেশে ১৪শ’র বেশি কর্মী কাজ করছেন। দুর্গত এলাকায় নেই সুপেয় পানি। দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে কলেরার মতো রোগ। নেই পর্যাপ্ত ঔষধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম। বিশ্ব নেতাদের বলবো, এদিকেও নজর দিন।
প্রসঙ্গত, বুধবার মার্কিন ভূ-তাত্বিক জরিপ সংস্থা- ইউএসজিএস জানিয়েছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারির জোরালো ভূমিকম্পের পর ৭ হাজার ২৪২টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে অঞ্চলটিতে। যেগুলোর প্রায় সবগুলো ৫ থেকে ৬ মাত্রার।
/এসএইচ
Leave a reply