মহানায়িকার জন্মদিন আজ

|

সুচিত্রা সেন (১৯৩১-২০১৪)

বাংলা চলচ্চিত্রে চিরদিনের, চিরকালের অবিস্মরণীয় এক বিস্ময় ‘মহানায়িকা সুচিত্রা সেন’। গত শতকের পঞ্চাশ আর ষাটের দশকে বাংলা রোমান্টিক সিনেমাকে এক অন্য স্তরে পৌঁছে দিয়েছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের সাথে সুচিত্রার চিরসবুজ জুটি। পরবর্তীতে দীর্ঘ তিন দশক লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে জন্ম দিয়েছেন অনেক রহস্যের। কিংবদন্তি এ অভিনেত্রীর ৯২তম জন্মদিন আজ।

তুখোড় ব্যক্তিত্ব, মায়াভরা চাহনি, গ্ল্যামার আর মন জয় করা অভিনয়- সবকিছু নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সবসময়ের সেরা অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মের পর সুচিত্রার দাদা তার নাম রাখেন ‘কৃষ্ণা’। আর, তার বাবার দেয়া নাম ছিল ‘রমা’। রমা সেন পঞ্চাশ দশকে হাজির হন টালিগঞ্জে- নায়িকা নয়, গায়িকা হতে। 

১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ সিনেমার মাধ্যমে রূপালী পর্দায় যাত্রা শুরু হলেও, সে সিনেমা আলোর মুখ দেখেনি। সুচিত্রার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমার নাম ‘সাত নম্বর কয়েদি’। তখনও তিনি ‘সুচিত্রা সেন’ নামে পরিচিত হননি। ১৯৫২ সালে ‘কাজরী’ সিনেমায় নিজের নাম রমা সেন থেকে পাল্টিয়ে ‘সুচিত্রা সেন’ নামে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। এরপর ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ দিয়ে সাড়া ফেলে দেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে।

মরণের পর, শিল্পী, সাগরিকা, হারানো সুর, চাওয়া পাওয়াসহ ৩০টির বেশি সিনেমায় এ জুটি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে বনে যান সর্বকালের সেরা জুটি।  তবে উত্তম ছাড়াও যে অনবদ্য তিনি; সেটিও প্রমাণ করে দিয়েছেন দীপ জ্বেলে যাই, সাত পাকে বাঁধার মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে।

বাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে সুচিত্রা সেন হিন্দি সিনেমাতেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম হিন্দি সিনেমা ছিল ‘দেবদাস’। সঞ্জিব কুমারের সাথে করা ‘আধি’ হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে রীতিমত মাইলফলক হয়ে রয়েছে। এ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মাধ্যমে সুচিত্রার অভিনয় প্রতিভার প্রতি কুর্ণিশ জানিয়েছিল গোটা বলিউড।

এখানেই শেষ নয়। সুচিত্রাই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী, যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬৩ সালে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসাবে ‘সপ্তপদী’র জন্য মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে পান সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।

সুচিত্রা সেন অভিনীত শেষ সিনেমা ‘প্রণয় পাশা’ মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। ওই বছরই  চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে অবসরগ্রহণ করেন তিনি। এরপর, দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন সুচিত্রা, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লি যেতে আপত্তি জানানোয় তাকে আর পুরস্কার দেয়া হয়নি।

আড়াল থেকেই ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অনিন্দ্য সুন্দর সুচিত্রা সেন। বেঁচে থাকলে আজ ৯৩ বছর বয়সে পা রাখতেন এ কিংবদন্তি। তার অমর আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। শুভ জন্মদিন মহানায়িকা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply