‘অ্যানফিল্ড অভিশাপ’ এবারও কাটাতে পারলো না আর্সেনাল! লিভারপুলের মাঠে গিয়ে টেবিল টপাররা ২-২ গোলে ড্র করায় ১৯ বছর পর গানারদের লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন খানিকটা হলেও হোঁচট খেয়েছে। তবে মিকেল আর্টেটার দল কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেতে পারে এই ভেবে যে, না হেরে অন্তত পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে পেরেছে। হাই ভোল্টেজ এই ম্যাচ ড্র হওয়ায় লিভারপুলের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা লড়াইকে শেষ ম্যাচ ডে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার সকল ব্যবস্থাই আর্সেনালকে রুখে দিয়ে করে ফেলেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল।
প্রথমার্ধের খেলায় মনে হয়েছিল, অ্যানফিল্ডে জয় না পাওয়ার এক দশকের খরা হয়তো ঘুচতে যাচ্ছে গানারদের। গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ও গ্যাব্রিয়েল জেসুসের গোলে প্রথমার্ধেই ২ গোলের লিড নেয় আর্সেনাল। তবে, প্রথমার্ধেই মোহামেদ সালাহর এক গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে রবার্তো ফিরমিনো আর্সেনালের বিপক্ষে তার গোলের ট্যালি ৮’এ নিয়ে গেলে কেবল ম্যাচই নয়, জমে ওঠে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার লড়াইও।
অ্যানফিল্ডে শুরু থেকেই ছিল আর্সেনালের দাপট। ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথায় গোলের দেখা পায় আর্সেনাল। স্কোর শিটে নাম তোলেন গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। মার্টিন ওডেগার্ড পাস বাড়িয়েছিলেন বুকায়ো সাকাকে। লিভারপুল ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক বাধা দিলেও বল তার পায়ে লেগে চলে যায় মার্তিনেল্লির কাছে। লিভারপুল গোলকিপার আলিসন বেকারকে বোকা বানাতে ভুল হয়নি ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারের।
২৮ মিনিটের মাথায় গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। বাম প্রান্ত থেকে মার্তিনেল্লির ক্রস থেকে দারুণ হেডে আলিসনকে পরাস্ত করে অ্যানফিল্ডকে নীরব বানিয়ে দেন জেসুস। তবে ৪২ মিনিটের মাথায় ম্যাচের ধারার বিপরীতে গোল করে খেলা জমিয়ে তোলেন মোহামেদ সালাহ। ২-১ গোলের স্কোরলাইন নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে ঠিক সেখান থেকেই শুরু করে লিভারপুল, যেখানে শেষ হয়েছিল প্রথমার্ধ। মুহুর্মুহু আক্রমণে আর্সেনালকে সম্পূর্ণ রক্ষণের কাজেই ব্যস্ত রাখে ক্লপের শিষ্যরা। এরইমধ্যে ডি বক্সে রব হোল্ডিং প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় ডিয়োগো জটাকে ফাউল করে বসলে পেনাল্টি পায় লিভারপুল। কিন্তু গোলের বাইরে দিয়ে মেরে সুবর্ণ সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন সালাহ।
তবে পেনাল্টি মিসের হতাশায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েনি অলরেডরা। সঙ্গে সঙ্গেই আক্রমণ শানিয়ে জানান দেয়, অ্যানফিল্ড-দুর্গ রক্ষা করতে শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা। আর্সেনাল গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেলকে তাই প্রদর্শন করতে হয় তার মাস্টারক্লাস পারফরমেন্স। সালাহর একাধিক শট, ডারউইন নুনেজের ওয়ান ভার্সেস ওয়ান পজিশন থেকে নেয়া শট রুখে দিয়ে আর্সেনালের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন রামসডেল।
কিন্তু ফুটবল বিধাতা হয়তো চিরায়ত ঘটনাগুলোর পুনরায় মঞ্চায়নকেই লিখে রেখেছিলেন চিত্রনাট্যে। গানারদের বিরুদ্ধে ৭ ম্যাচে ৭ গোলের রেকর্ডধারী লিভারপুলের বিদায়ী নাম্বার নাইন রবার্তো ফিরমিনো নামলেন মাঠে। নির্ধারিত সময় শেষের ৩ মিনিট আগে ডানপ্রান্ত থেকে জিনচেঙ্কোকে নাটমেগ করে ডি বক্সে ঢুকে পড়েন ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড। ফারপোস্টে বাড়ানো এই রাইট ব্যাকের ক্রসে দারুণভাবে হেড করে রামসডেলের কৃতিত্বে ভাগ বসান ফিরমিনো। ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকার অব্যাহত রাখলেন গানারদের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত রেকর্ড। আর অক্ষত রইলো অ্যানফিল্ড।
ম্যাচের বাকি সময়ে আবারও কয়েক দফা দুর্দান্ত পারফরমেন্সে আর্সেনালকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন অ্যারন রামসডেল। দুই গোলের লিড সত্ত্বেও যে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে খুব বেশি হতাশ হওয়ার সুযোগ থাকছে না আর্সেনালের, তার কৃতিত্বও এই ইংলিশ গোলরক্ষকের।
সিটির চেয়ে লিগ টেবিলে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারালো মিকেল আর্টেটার দল। ৩০ ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে এখনও টেবিলের শীর্ষেই রয়েছে গানাররা। তবে ১ ম্যাচ কম খেলে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই ম্যান সিটি। পেপ গার্দিওলার দলের বিপক্ষে ২৮ এপ্রিল খেলতে হবে আর্সেনালকে। আর সেই ম্যাচ জয়সহ নিজেদের বাকি সব ম্যাচেই যদি জয় পায় সিটি, তবে কপাল পুড়বে আর্সেনালের। কারণ, গোল পার্থক্যে আর্সেনালের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে পেপ গার্দিওলার দল।
সেই সাথে, পয়েন্ট টেবিলের তিনে থাকা নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষেও কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে আর্সেনালকে। এই ধাক্কার রেশ যদি দ্রুত না কাটাতে পারে গানাররা, তবে হয়তো কেবল নিজেদের পারফরমেন্সই নয়, তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ম্যান সিটির পয়েন্ট হারানোর জন্যও। অ্যানফিল্ডে জয় না পাওয়ার মাশুল কী কতটা বড় হবে আর্সেনালের, সেই প্রশ্নের জন্য হয়তো আরও একবার চোখ রাখতে হবে প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচ ডে পর্যন্ত।
/এম ই
Leave a reply