মহান মে দিবস: ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা আয় বৈষম্যের প্রধান শিকার’

|

মাসুদুজ্জামান রবিন:

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে আর্থ-সামাজিক নানা পর্যায়ে এসেছে সাফল্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু কর্মঘণ্টা, কর্মনিরাপত্তা এবং ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তিতে এখনও পিছিয়ে তারা। শ্রমিক সংগঠন এবং অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের তুলনায় বেশি আয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। মে দিবসে বৈষম্যহীন ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত হোক প্রতিটি শ্রমিকের, এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন শ্রমিকরা। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির বাজারে আয়ের সাথে সমন্বয় করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাদের। হাড়ভাঙা খাটুনির পরও মিলছে না ন্যায্য পারিশ্রমিক। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, সেখানে খাদ্যের সংস্থান করাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের কথায়ও উঠে আসে সেই চিত্র। একজন নির্মাণ শ্রমিক বলেন, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সেভাবে মজুরি বাড়ছে না। সন্তানদের লেখাপড়া করাবো কীভাবে, আর খাওয়াবো কীভাবে!

নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে রক্ত দেয় বহু শ্রমিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ১২ ঘণ্টার বেশি শ্রম দিলে যে পারিশ্রমিক মিলবে, তা দিয়ে পূরণ হবে সীমিত চাহিদা। তাই দিনভর ক্লান্তিহীন ঘাম ঝড়াতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক শ্রমিক। আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে কাজের জন্য নির্দিষ্ট ৮ ঘণ্টার কোনো বালাই নেই তাদের জীবনে। শ্রমিকদের ভাষ্য মতে, ১৩-১৪ ঘণ্টার বেশিও কাজ করতে হয় তাদের। বাড়তি সময় কাজের জন্য নেই বাড়তি মজুরি। কিন্তু পাঁচ মিনিট দেরি হলে হারাতে হয় সেদিনের কাজ।

দেশের মোট শ্রমশক্তির ৭০ শতাংশের বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত আছে। গার্মেন্টসসহ প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষায় শ্রম আইন ও শ্রম বিধি কিছুটা সুরক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু দেশের ৫ কোটি অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমন অভিমত শ্রমিক সংগঠনগুলোর।

শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একজন শ্রমিককে ৩ হাজার কিলো ক্যালরি খেতে হয়। তারা যদি মজুরিই কম পায় তবে সেই চাহিদা কীভাবে মেটাবে? এতে কর্মদক্ষতা হ্রাস পাবে। ভবিষ্যতেও উৎপাদনশীলতায় এর প্রভাব পড়বে।

ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দেশজ উৎপাদন ও মাথাপিছু আয়। বাড়ছে রফতানি আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ। অথচ পাঁচ দশক পেরিয়ে এখনো সস্তা শ্রমিকের দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশে। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, শ্রমিকের আয় ও জীবনমান বাড়াতে নীতি নির্ধারকদের নতুনভাবে চিন্তা করা উচিত। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, এত যে ইতিবাচক উন্নয়ন হচ্ছে, নিম্ন আয়ের মানুষ ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা মানুষ যেন সেই প্রবৃদ্ধির ভাগ, সেই সুফলটা ভোগ করতে পারে। সে জন্যই মজুরির ব্যাপারটা নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।

মে দিবসের প্রত্যাশা, একদিন শ্রমজীবী মানুষের অধিকার শতভাগ নিশ্চিত হবে। ঘুচবে মজুরি বৈষম্য। নিশ্চিত হবে নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও কর্মনিরাপত্তা।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply