অনুমতি ছাড়া দেশীয় অস্ত্র তৈরি করা যাবে না, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামারদের সতর্ক করলো প্রশাসন

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড় বেষ্টিত অঞ্চল নাসিরনগর। ১৩ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় পান থেকে চুন খসলেই ঘটে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে অসংখ্য লোক আহতের পাশাপাশি ঘটে প্রাণহানিও। এসব সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয় টেঁটা-বল্লমসহ নানা দেশীয় প্রাণঘাতী অস্ত্র।

সম্প্রতি জেলা জুড়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সংঘর্ষ রোধে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ নেয় জেলা পুলিশ। কামারি পেশার সাথে জড়িতদের সাথে আলোচনা করে জানানো হয়, অনুমতি ছাড়া লোহার কোনো অস্ত্র তৈরি করা যাবে না।

জানা গেছে, পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে নাসিরনগর থানা পুলিশ। এর অংশ হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে তারা। গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

এদিকে গত শনিবার (৬ মে) দুপুরে অনুষ্ঠিত কামারদের নিয়ে এক আলোচনা সভায় এ পেশায় জড়িতদের সতর্ক করেছে প্রশাসন। জানানো হয়েছে, অনুমতি ছাড়া লোহার কোনো অস্ত্র তৈরি করা যাবে না। যারা অস্ত্র কিনতে আসবে তাদের নাম ঠিকানা রেখে পুলিশকে অবহিত করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে একমত হয়েছেন কামারেরা।

নাসিরনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত একমাসে নাসিরনগরে বেশকিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষে কয়েক হাজার লোক আহত এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। সম্প্রতি ঈদের দিনেও সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামে ধান মাড়াইয়ের খাস জায়গার দখল নিতে লাগা সংঘর্ষে নিহত হয় কৃষক জামাল। পরে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে নাসিরনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।

অভিযানে উপজেলার প্রায় ২৫টি গ্রাম থেকে ৩ হাজার দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে অস্ত্র আইনে তিন মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়।

উপজেলার নূরপুর, হরিপুর, নরহা, চিতনা, ধরমণ্ডল, শংকরাদহ, গোকর্ণ, কুন্ডা, কুন্ডা জেলে পাড়া, শ্রীঘর, চাপরতলা, ভোলাউক, উরিয়াইন, আতুকুড়া, মুকবুলপুর ও পূর্বভাগ গ্রামে অভিযান চালিয়ে উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে কাতরা, সড়কি, রামদা, বল্লম, টেঁটা, ফলা ও চল।

হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের গ্রামে প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে মারামারি হয়। পুলিশ আমাদের কাছে অস্ত্র উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়েছে। আমরা গ্রামবাসীদের নিয়ে আলোচনা করে সকল দেশীয় অস্ত্র পুলিশের হাতে জমা করে দিয়েছি।

নাসিরনগর থানা ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসপি স্যারের নির্দেশে আমরা এ অভিযান শুরু করেছি। আমরা যে সকল অস্ত্র উদ্ধার করছি মারামারির সময় সেগুলো ব্যবহারের ফলে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। হাতের কাছে অস্ত্র না থাকলে মারামারির প্রবণতা কমে আসবে। এরই আলোকে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা অটুট রাখতে নিয়মিত চলবে এ অভিযান।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply