মৃত্যুর ৪৭ বছর পর মেজর জেনারেল জিয়াকে হুকুমের আসামি করে কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে মামলা করেছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান। মামলায় মেজর (অব.) আবদুল জলিলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরকে (অব.) হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলার এই তিন আসামিই মারা গেছেন।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বৃহস্পতিবার (১১ মে) মামলা হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নাহিদ ইজাহার খান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। হত্যাকাণ্ডের এত দিন পর মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বাবার হত্যাকাণ্ডের সময় আমাদের দুই ভাই-বোনের বয়স পাঁচ ও আট বছর। তখন পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল না। বাবার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তথ্যপ্রমাণ যতটুকু হাতে পেয়েছি, সে অনুযায়ী এখনই মামলা করার সঠিক সময় বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
নাহিদ ইজাহার খান মামলায় বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে রংপুরের ৭২ ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম নিহত হন। নাজমুল হুদার সাথে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমও নিহত হন।
মামলায় নাহিদ ইজাহার খান উল্লেখ করেন, তার বাবা (নাজমুল হুদা) নিহত হওয়ার সময় তিনি ও তার ভাই ছোট ছিলেন। তারা বড় হয়ে জানতে পারেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার সাথে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার (বীর উত্তম) ও উপস্থিত ছিলেন। পরে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা নাজমুল হুদাসহ তিন কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে যান।
নাহিদ ইজাহার খান আরও জানান, ১৯৭৫ সালে তখনকার সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকেরা সংঘবদ্ধভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটান। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ, মেজর মুকতাদির ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা আরও জানতে পারেন, দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকদের সাথে মেজর মো. আসাদ উজ্জামান (অব.), মেজর মো. আবদুল জলিল (অব.) সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, খালেদ মোশাররফ ও এ টি এম হায়দারকে গুলি করে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলির পর বেয়নেট দিয়েও তাদেরকে আঘাত করা হয়।
নাহিদ ইজাহার খান মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নাজমুল হুদা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বায়রা সাব–সেক্টর কমান্ডার। পরে দেশে তাদের জন্য সময়টা এতটাই বিপরীতে যায় যে, একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে তার ভাই গিয়েছিলেন বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। সাদেক হোসেন খোকা তার ভাইয়ের আবেদনপত্র হাতে নিয়ে বাবার নাম দেখে তাকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন।
/এনএএস
Leave a reply