স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটা বক্তব্যে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে কমিটমেন্ট, সেটিকে সমর্থন করে তারা এটি (নতুন ভিসানীতি) দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর যে কমিটমেন্ট ও ইচ্ছে, এ সম্পর্কে তারা অবগত এবং সেটিকে সমর্থন করছে— বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসানীতি সম্পর্কে এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) যমুনা নিউজকে মুঠোফোনে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে, নতুন এই ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকের পরই তিনি এ কথা বলেন।
যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুর পৌনে ১২টা থেকে পৌন ২টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে মোহাম্মদ এ আরাফাত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। আর জাপার পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল।
কেন এই বৈঠক? এই প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ওরা আমাদের আমন্ত্রণ করেছিল। ওদের (মার্কিন দূতাবাস) উদ্দেশ্যেটা ছিল, গতকাল যে ঘোষণা (নতুন মার্কিন ভিসানীতি) এসেছে তা নিয়ে ব্রিফ করা। আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং কী ভাবছি তা জানতে চেয়েছে। মূলত পুরো স্টেটমেন্টটা পড়ে আমরা যেটা বুঝেছি, তারা সেটা রিপিট করেছে। ডোনাল্ড লু এর বক্তব্য আমরা শুনেছি আর অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বার্তা তো আমরা দেখেছি।
মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, আমাদের দিক থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই ঘোষণা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। কারণ, বাংলাদেশে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমরা মনে করছি, একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। সেটা হচ্ছে, আমরা যতবারই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চেয়েছি, বিএনপি কোনো না কোনোভাবে নষ্ট করেছে। সহিংসতা করেছে বা নির্বাচনকে আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছে কিংবা আসেনি, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। গতকালও তারা দুইটা বাস জ্বালিয়েছে। তারা এখন রাস্তায় নামে সরকারকে ফেলে দেয়ার জন্য এবং নির্বাচনকে তারা মানে না। তাদের সো কল্ড ‘কেয়ারটেকার সরকার’ এর দাবি রয়েছে। এটা নিয়ে গোটা বিশ্বের সমর্থন ও মতামত নেই। সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও তা চাই। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে এবং সহিংসতা করে। সহিংসতা যারা করবে তাদের জন্যও এই ঘোষণাটা এসেছে। আমি মনে করি, বিপদে পড়লে বিএনপি পড়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যাও তা চান।
তিনি আরও বললেন, তাদের ঘোষণা নিয়ে আমরা অতি আহ্লাদিত না, আবার চিন্তিতও না। এটা নিয়ে আমরা শক্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি না। আমরা যেটা চাই, এটা তো সেটাই, একই তো। বরং বিএনপি বিপদে পড়বে। অগ্নি সন্ত্রাস থেকে বিরত থাকতে হবে, নির্বাচনে আসুক বা না আসুক।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বক্তব্য শুনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কী জানিয়েছেন? জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এ সদস্য বলেন, তারা আমাদের বক্তব্য শুনে ইতিবাচক। তারা বলেছেন, আমরা শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবো তা ভেবেছিল। অন্য কেনো পদক্ষেপ নিবো। এ ব্যাপারে আমরা ডিপ্লোমেটিক, তারা তাদের দেশে কাকে ঢুকতে দেবে বা দেবে না সেটি তাদের অধিকার। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেহেতু এই ঘোষণা, তাই এটা কিছুটা হস্তক্ষেপ। তবে দিনশেষে উদ্দেশ্যটা যেহেতু মিলে গেছে তাদের ও আমাদের; সহিংসতা নিয়ে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে বিএনপি সহিংসতা করে আসছে। তারা আমাদের স্টেটমেন্টে খুশি। প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্টে তাদের আস্থা রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের কোনো বক্তব্য নেই, বিএনপির যে চাহিদা তা নিয়ে। বিএনপির আরও যে চাহিদা, নির্বাচন কমিশন ভালো না খারাপ, তা নিয়েও বক্তব্য নেই তাদের। আমরা তাদের বলেছি, একটা আইন করেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এটা হয়নি। সার্চ কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় এটি গঠন হওয়ার পর যথেষ্ট ভালো নির্বাচন করেছে। এমনকি গাইবান্ধায় উপনির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোটের আগের দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। তারা তো শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে।
মোহাম্মদ এ আরাফাত আরও বললেন, আমরা আরও একটা কথা বলেছি। আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। সামনের নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করছি না। তারপরের নির্বাচন এবং অনাগত কালের আগামী সকল নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয় সেই প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যার যে দাবি ছিল, স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, সেটা হয়েছে। বিএনপির আমলে ভুয়া ভোটার ছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যার দাবির প্রেক্ষিতে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছেন তিনি। কিছুদিন আগে একটা আইনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, গণমাধ্যম কর্মী ও পর্যবেক্ষকদের যারা বাধা দেবে, তাদের সাজার আওতায় আনা হবে। আমরা বলেছি, তোমরা যেটা বলছো, আমরাও সেটা বলছি। আমরা নিজেরাই দীর্ঘমেয়াদী একটা সমাধানের জন্য এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমরা মনে করি না, এমন ঘোষণায় বাংলাদেশ আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর তা আওয়ামী লীগকেই করতে হবে। বিএনপি তো সহযোগিতা করবে না।
বৈঠকে বিএনপি কী বলেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা গৎবাঁধা কথা বলেছে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি। আর মার্কিন এই ভিসানীতি সকলের জন্য প্রযোজ্য, নির্দিষ্ট কোনো দলের জন্য নয়। সহিংসতা করলে যে কারও জন্য প্রযোজ্য বলে জানানো হয় আমাদের।
/এমএন
Leave a reply