রূপকথা লেখা হলো না স্টোকসের, ২-০’তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া

|

ছবি: সংগৃহীত

মিরাকল সব সময় ঘটে না বলেই হয়তো অবিশ্বাস্য অর্জনের মাহাত্ম্য বরাবরই বিশেষ। তাই একই ধরনের ক্রিকেটীয় রূপকথার পুনরাবৃত্তির কাছে গিয়েও বেন স্টোকসের হাতে ধরা পড়লো না চূড়ান্ত সাফল্য। লর্ডসে আর হেডিংলিকে ফিরিয়ে আনা গেলো না। ২০২৩’এ মঞ্চস্থ হলো না ২০১৯’র রূপকথা। লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪৩ রানে হারিয়ে অ্যাশেজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। ১৫৫ রানের অসামান্য এক ইনিংস খেলা বেন স্টোকস তাই লর্ডসের হিরো নন, ট্র্যাজিক হিরো।

এজবাস্টনের পর টেস্ট ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের আরেক বিজ্ঞাপনই হয়তো হয়ে থাকবে লর্ডস, যেখানে শেষদিনে ক্ষণে ক্ষণে ফিরে এসেছে ২০১৯ অ্যাশেজের হেডিংলি টেস্টের ছায়া। ফিরিয়েছেন বেন স্টোকস। এরকম দিনেই প্রতিপক্ষ অধিনায়কের মনে হয়, বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য যেন হঠাৎই কমে এসেছে! সঙ্গীর অভাবে সিঙ্গেলস, ডাবলসের সুযোগ নেয়া যাচ্ছে না। রান করতে হচ্ছে কেবল বাউন্ডারি থেকে। একের পর এক শর্ট অব লেন্থের বল এবং অন সাইডের বাউন্ডারিতে ছাতার মতো সাজিয়ে রাখা অজি ফিল্ডারদের কারণে বাউন্ডারির সুযোগও কমে এসেছিল ইংলিশ অধিনায়ক স্টোকসের জন্য। এক পর্যায়ে তাই ওভার বাউন্ডারিতেই দলকে এগিয়ে নিতে চাইলেন। ৯টি বাউন্ডারির সাথে হাঁকালেন ৯টি ওভার বাউন্ডারি!

অস্ট্রেলিয়া বনাম বেন স্টোকসের লড়াই যখন চরমে, স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়ে ইংলিশ অধিনায়ক ৭ম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১০৮ রান। এমন সময়েই ক্রিকেটীয় ফ্যান্টাসিপ্রেমীদের জন্য এলো দুঃসময়। জশ হ্যাজলউডের বলে টাইমিঙে গড়বড় করে অ্যালেক্স কেরির হাতে ধরা পড়েন স্টোকস। হতাশায় মুষড়ে পড়া তার মুখভঙ্গিতেই লেখা ছিল, অবিশ্বাস্য জয়ের বন্দরের কাছে দলকে নিয়ে এলেও চূড়ান্ত জয় না এলে টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংসের মূল্যও যে খুব বেশি নয়! ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও অ্যাশেজ জয়ের গল্প ইতিহাসে আছেই কেবল একবার। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের দল সেই কীর্তি গড়েছিল ১৯৩৬-৩৭ সালের অ্যাশেজে।

৩৭১ রানের জয়ের লক্ষ্যে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নেমে মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের তোপে মাত্র ৪৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ একপ্রকার ছিটকেই যায় ইংল্যান্ড। কিন্তু বেন ডাকেট ও বেন স্টোকসের ৫ম উইকেট জুটিতে করা ১৩২ রানে আবারও ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেটকে সাজঘরে ফেরান জশ হ্যাজলউড। ইংল্যান্ডের রান যখন ৫ উইকেটে ১৯৩, ক্যামেরন গ্রিনের শর্টবলে ডাক করেন জনি বেয়ারস্টো। বল ডেড হয়েছে ধরে নিয়ে নন স্ট্রাইকে থাকা স্টোকসের সাথে কথা বলতে ক্রিজ ছাড়েন তিনি। এরই মধ্যে অজি উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স কেরি ভেঙে দেন স্ট্যাম্প। থার্ড আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস সিদ্ধান্ত জানান, আউট! আর এতেই একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে থেকে যান বেন স্টোকস।

সেই থেকে শুরু স্টোকসের খোলস ছেড়ে বের হওয়া। ক্যামেরন গ্রিনকে টানা তিনবার গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে শতক পূর্ণ করেন এই বাঁহাতি। লাঞ্চ বিরতির আগে মুখোমুখি ১৯ বলে ৪৪ রান তুলে অজিদের মনে আবারও হেডিংলির দুঃস্মৃতিকে জীবন্ত করে তোলেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ অজিদের বডি লাইন বোলিংয়ের স্বার্থক রূপায়নে একার হাতে আরও একবার রূপকথা রচনা করতে পারলেন না স্টোকস। তবে, আউট হয়ে ফেরার সময় লর্ডসে উপস্থিত অস্ট্রেলিয়ান দর্শক-সমর্থকদেরও দাঁড়িয়ে করতালি দিতে বাধ্য করা স্টোকসকে দেখে কে বলবে, গত ১৪ ইনিংসে একটি ফিফটিও ছিল না তার! তবে এবার স্টোকস বাহিনীর এবারের মিশন একটু বেশিই কঠিন। তবে ইংলিশ দলপতি ম্যাচ শেষে বলেছেন, যেহেতু আরও ৩টি ম্যাচ বাকি, আমরা ৩-২’র কথা ভাবছি।

এমন ইনিংসের পর কামিন্স বাহিনীও নিশ্চয়ই স্টোকসের কথাকে হেসে উড়িয়ে দিতে পারবে না!

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply