জ্বালানি তেল ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে বেসরকারি খাত, নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত

|

মাহফুজ মিশু:

পেট্রোল-অকটেন-ডিজেল তথা জ্বালানি তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছাড়ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে জ্বালানি বিভাগ। এর ফলে তেল আমদানি, পরিশোধন, মজুদ, পরিবহণ ও বিক্রির একক ক্ষমতা হারাবে সরকার। এতে তেলের দাম “প্রতিযোগিতামূলক” হবে দাবি করে দ্রুতই এটি পাস হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব ক্ষেত্রে খুবই জরুরি হচ্ছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকর কার্যকর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা।

১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামে স্থাপিত দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। এখানে বছরে পরিশোধন করা হয় ১৫ লাখ টন তেল, যা দেশের মোট চাহিদার ২০ ভাগ। চাহিদার বাকি ৮০ ভাগ মেটানো হয় আমদানি করা তেলে। সব আমদানির একক প্রতিষ্ঠান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি।

পদ্মা-মেঘনা, যমুনা- বিতরণকারী তিন কোম্পানির মাধ্যমে সারাদেশে অভিন্ন দামে তা বিক্রি করে বিপিসি। এবার সেই ক্ষমতা হারাচ্ছে সরকার, যুক্ত হচ্ছে বেসরকারি খাত।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, এরইমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পলিসিও তৈরি করে ফেলেছি। আশা করছি এ মাসের মধ্যে প্রাইভেট সেক্টরে রিফাইনারি করে তেল ডিস্ট্রিবিউশন চলে আসবে মাঠে।

ঋণ খেলাপি নয়, এমন কোম্পানি, পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে তিন বছর ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করেছে, তারা রিফাইনারির উদ্যোক্তা হবে। আর বছরে ১৫ লাখ টন শোধনের সক্ষমতা থাকা বাধ্যতামূলক।


রিফাইনারী বানাতে লাগবে ৮০ একর জমি আর দু’লাখ টান তেল মজুদের সক্ষমতা। সঙ্গে আড়াইশ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি।


প্রথম তিন বছর পরিশোধন করা তেলের ৬০ শতাংশ সরকারের কাছে বেচতে হবে। পরের দু’বছর ৫০ শতাংশ সরাসরি বাজারে বিক্রির সুযোগ থাকবে।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরও বলেন, মেকানিজম থাকবেই। সেটা অন্যান্য দেশেরও আছে। প্রতি মাসেই টাইম ডিক্লেয়ার করা থাকবে, এই সময়ের মধ্যে সেটা অ্যাডজাস্ট করতে হবে। যারা রিফাইনারি থেকে তেল বানায় তারা প্রাইসটা ফলো করবে। তাহলে গ্রাহক পর্যায়ে সাশ্রয়ী দামে তেল পাবে।

দেশে তেলের চাহিদার বড় অংশই ডিজেল। কিন্তু পরিশোধনের পর সেটি ছাড়া যে বিপুল পরিমাণ পেট্রোল-অকটেন পাওয়া যাবে, স্থানীয় বাজারে তা কাজে লাগবে কিনা, সে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে কেউ যদি ১.৫ মিলিয়ন ক্যাপাসিটিতে তেল শোধনাগার তৈরি করে তাহলে সেক্ষেত্রে বাইরে রফতানির মতো করে তার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেটা ভারতে আছে।

অধ্যাপক তামিমের সতর্ক মন্তব্য- তেলের মতো কৌশলগত পণ্য নিয়ে রাষ্ট্র-সরকার-জনগণ যেন বেকায়দায় না পড়েন। তিনি আরও বলেন, রেগুলেটরকে স্বাধীনভাবে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষভাবে মার্কেট রেগুলেট করা। আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করাটা সবচেয়ে জরুরি। না হলে ভোক্তা ঠকবে।

আর এজন্যই তাড়াহুড়া না করে বিষয়টি চূড়ান্ত করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply