রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম পরিবহনে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো কিছুর দায় নেবে ঢাকা

|

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

মাহফুজ মিশু:

ঢাকা থেকে সড়ক পথে যাবে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের জ্বালানি, ইউরেনিয়াম। এ সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাংলাদেশকেই। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আর্থিক নিশ্চয়তাপত্র ইস্যু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, যৌথ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আগাম ঘোষণা দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে ইউরেনিয়াম পরিবহন করলে ঝুঁকি কম।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা, আগামী বছর এখানে উৎপাদন শুরু করার।

এরইমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে রূপপুরের জন্য রাশিয়া থেকে জ্বালানি ইউরেনিয়াম আনার বিষয়টি। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই দেশে ঢুকবে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান। যা বিশেষ বিমানে পৌছাবে ঢাকা। তারপর সড়ক পথে নেয়া হবে পাবনার রূপপুরে। এ সময় যে কোনো বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, হামলা বা ঝামেলা হলে তার দায়ও নিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে বিষয়টি চুড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ।

সড়কপথে ইউরেনিয়াম অন্যান্য দেশেও নেয়া হয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রাপথ নিরাপদ রাখতে পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিরিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, যৌথবাহিনীর তত্ত্বাবধান ও তদারকির মাধ্যমে এগুলো স্থানান্তর করা উচিত। এ ধরনের ডুয়েল থেকে রেডিয়েশন লিক হওয়ার বড় ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এজন্য নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো হুমকিও নেই।

আর বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বললেন, ভিআইপিরা যেভাবে রাস্তা ব্লক করে সামনে যান সেভাবে এগুলো নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাতে ঝুঁকিও অনেক কমে যায়। এ পদ্ধতিতে কাজ করলে বছরে দুইবার করা সম্ভব। তবে ট্র্যাফিকের মধ্যে গেলে কিছুটা ঝুঁকি থাকেই।

এদিকে, দায়িত্বশীলরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)’র নীতি মেনে জ্বালানি পরিবহণ করা হবে। এক্ষেত্রে উদ্বেগের কিছু নেই জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু প্রায় প্রতিবছরই ইউরেনিয়াম আনতে হবে। তাই এ জ্বালানি পরিবহণে সুস্পষ্ট নীতিমালা জরুরি। পাশাপাশি, একক কোনো দেশ নয় বরং ইউরেনিয়ামের বিকল্প উৎসও রাখার পরামর্শ তাদের।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিরিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, যারা রিঅ্যাকটর সাপ্লাই দিচ্ছে তাদের থেকেই যে সবসময় ফুয়েল আনতে হবে তার কোনো মানে নেই। কনভেনশনাল পাওয়ার গ্রিডগুলোয় আমরা সবসময়ই জ্বালানি সংকট দেখতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে যাতে জ্বালানির সরবরাহে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য একটা সুস্পষ্ট পলিসি থাকা দরকার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট বলছে, পারমাণবিক কোনো দূর্ঘটনা হলে তার ক্ষতিপূরণ সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩শ কোটি টাকা। সড়কপথে ইউরেনিয়াম পরিবহণে তেমন কিছু হলে সে টাকা গুনতে হবে বাংলাদেশকেই।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply