শিল্পী জহির রায়হানের ৮৮তম জন্মদিন আজ

|

চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সাংবাদিক প্রতিটি পরিচয়ে পরিচিত তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল তার পদচারণা, পরিচয় দিয়েছেন পারদর্শিতার। তবে সব ছাপিয়ে একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এবং জীবনস্পর্শী প্রতিবাদী সাহিত্য ধারার গুণী শিল্পী জহির রায়হানের ৮৮তম জন্মদিন আজ।

পুরো নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাক নাম জাফর। তবে মানুষের কাছে জহির রায়হান নামেই খ্যাত তিনি। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্ম তার। ১৯৪০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। সেখানেই বড় ভাই শহীদুল্লাহ’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন জহির। ছাত্রজীবনেই সাংবাদিক হিসেবে শুরু হয় কর্মজীবন। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’। তাঁর রচিত কালজয়ী উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী ও আর কতদিন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম যে ১০ জনের দলটি ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল, জহির রায়হান তাদেরই একজন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও জড়িত ছিলেন। এ সময় তিনি ক্যামেরা হাতে সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। চলচ্চিত্রেও আগ্রহ সে সময় থেকেই।

১৯৫৭ সালে পরিচালক এ জে কারদারের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন জহির রায়হান। ১৯৬০ সালে ‘কখনো আসেনি’ সিনেমা দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় পাকিস্তানের প্রথম রঙিন সিনেমা ‘সঙ্গম’। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’। এরপর একে একে নির্মাণ করেন সোনার কাজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, আনোয়ারা, জীবন থেকে নেয়া’র মত কালজয়ী সিনেমা।

১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জীবন থেকে নেয়া’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত। এই সিনেমায় রূপক আকারে তুলে ধরা ভাষা আন্দোলন তার ওপর এতোটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সময় তিনি চলে যান ওপার বাংলায়। সেখানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার অভিযান শুরু করেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনির অত্যাচারকে কেন্দ্র করে তৈরি করেন প্রামান্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। যা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ।

সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে জহির রায়হান বাংলা একাডেমি পদক লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ‘কাঁচের দেয়াল’ সিনেমার জন্য পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মাননা ‘নিগার পুরস্কার’-এ শ্রেষ্ঠ পরিচালক নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে রাশিয়ার তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও ‘স্টপ জেনোসাইড’ বিশেষ পুরস্কার লাভ করে।

মাত্র ৩৭ বছর জীবনের পরিধি ছিলো তাঁর। ছোট্ট এই ক্ষুদ্র জীবনে একজন মানুষ কতোটা দিতে পারেন, জহির রায়হান ছিলেন তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি। এমনকি তার মৃতদেহও পাওয়া যায়নি। তবে চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া কাজ আজও গেঁথে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply