এডিস নিধনে ফগিংয়ের কার্যকারিতা: বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই সিটি

|

আখলাকুস সাফা:

কতটা কাজে আসছে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা মশা মারতে সিটি করপোরেশনের ফগিং পদ্ধতি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটির দাবি, ভালো কাজ হচ্ছে ফগিংয়ে। এক এলাকায় ৭ দিনে ১০ জনের বেশি রোগী থাকবে না, এমন টার্গেট নিয়ে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে দক্ষিণ। এর ঠিক উল্টো অবস্থানে ঢাকা উত্তর। তাদের দাবি, ফগিং পুরনো পন্থা। এটি আর আগের মতো কাজ করছে না। তাই কাউন্সিলরদের আহ্বায়ক করে তিন স্তরের টাস্কফোর্স করেছে উত্তর সিটি। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এতো বছরের পুরনো কীটনাশকে উল্টো বেড়েছে মশার প্রতিরোধ সক্ষমতা। রেজিসটেন্স গবেষণা করে তা বদলানো দরকার। অন্যথায় শুধু ওষুধই ছিটানো হবে, মশা আর মরবে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটত্ত্ববিদ ড. আবু ফয়েজ মো. আসলাম জানালেন, ফগিংয়ের কার্যকারিতা এখন কতটুকু। তিনি বলেন, আমাদের লোকালি কতটুকু রেজিসটেন্স হচ্ছে? ঢাকায় যেটার রেজিসটেন্স হচ্ছে অন্য জায়গায় সেটার রেজিসটেন্স নাও হতে পারে। তার মানে, পুরো এলাকায় কোন ইন্সেকটিসাইডে কতটুকু রেজিসটেন্স হচ্ছে সেটার জানার পর যেগুলোতে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলো বাদ দিয়ে বিকল্প খুঁজতে হবে।

তার পরামর্শ, গবেষণা হতে হবে কীটনাশকের রেজিসটেন্স নিয়ে। কাজ হতে হবে সমন্বিত উপায়ে। ড. আবু ফয়েজ মো. আসলাম বলেন, এই দ্বৈততা পরিহার করে আমার মনে হয়, একটি কম্বাইন্ড অ্যাপ্রোচে যাওয়া উচিত। এখন যেহেতু ডেঙ্গু পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে, এখন তো আমাকে হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচে কাজ করতে হবে; যাতে আর একটা মানুষও মারা না যায়।

এ বছর ডেঙ্গু ছাড়িয়েছে আগের ২৩ বছরের রেকর্ড। আগস্টেই ভাইরাসটির এমন ভয়াবহতা আগে দেখেনি দেশ। কীটতত্ত্ববিদ ড. আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি যতদিন হবে ততদিনই ভয়ের। এই কীটত্ত্ববিদ বলেন, বৃষ্টিপাত যদি এভাবে থেমে থেমে হতে থাকে তাহলে আসলেই কিন্তু পরিত্রাণের কোনো উপায় নাই নভেম্বর পর্যন্ত। এডিসের ডিমগুলো ১-২ বছর পর্যন্ত প্রকৃতিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। যখনই সে পানি পাবে, লার্ভা অ্যাডাল্ট হলে আবার সংক্রমণের হারটাও একইরকম হবে।

ডক্টর আফরোজার পরামর্শ, মশা নিধনের কাজ চলতে হবে সারাবছর, এমনকি শীতেও। তিনি বলেন, এই দুর্ভোগ, এই পরিস্থিতি যেন আগামী বছর দেখতে না হয় সে জন্য শীতের সময় থেকেই কাজ শুরু করতে হবে, একদম বছরের শুরু থেকেই।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply