যানজট থেকে স্বস্তি পেতে খুললো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুয়ার

|

রাজধানীর যানজট কমাতে খুলে দেয়া হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুয়ার। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। উদ্বোধনের পর তারা মোনাজাতে অংশ নেন।

এরপর প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে কাওলা থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৪টার দিকে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামে সরকার প্রধানের গাড়ি। এর আগে, বাংলাদেশের আরেক মেগা প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতুরও প্রথম যাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা।

টোল দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিটিভির সৌজন্যে।

অর্থায়ন, নকশা ও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৫ দফা পিছিয়ে ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম। এখনও পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও রাজধানীর যানজট আপাতত কমাতে প্রকল্পের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ খুলে দেয়া হলো। আগামীকাল থেকে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে কাওলা থেকে ফার্মগেটে পৌঁছা যাবে ১০ মিনিটেই। আর পুরো কাজ শেষ হলে ২০ মিনিটেই পাড়ি দেয়া যাবে কাওলা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত।

এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। উঠা-নামার র‍্যাম্পের জন্য সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

জেনে নেয়া যাক এই প্রকল্প সম্পর্কে:

কাজের মেয়াদ:

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০১১ সালে এই মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ৫ দফা পিছিয়ে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের ৩০ জুন।

দৈর্ঘ্য:

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। প্রকল্পটি বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও, মগবাজার, সায়েদাবাদ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্পের কাজ:

৩টি ধাপে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথম ধাপে বিমানবন্দর হতে বনানী রেল স্টেশন পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কি. মি.। দ্বিতীয় ধাপে বনানী হতে মগবাজার রেল ক্রসিং, দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ কি. মি.। তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেল ক্রসিং হতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৪৩ কি. মি.।

কাজের অগ্রগতি:

এখন পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ১ম ধাপের কাজ শতভাগ শেষ হলেও ২য় ধাপের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। আর ৩য় ধাপের অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। যানজটের কথা মাথায় রেখে আপাতত খুলে দেয়া হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ। এতে ১৫টি র‍্যাম্প রয়েছে। এগুলোর ১৩টি খুলে দেয়া হবে।

প্রকল্প ব্যয়:

এই মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। যার ২৭ শতাংশ সরকার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। বাকি অর্থের যোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন দেবে ১৫ শতাংশ অর্থ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’।

উদ্বোধনের পর এলিভেটেড এক্সেপ্রেসওয়ে পাড়ি দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর।

টোল:

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলে যানবাহনকে ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, জিপ, মাইক্রোবাসসহ হালকা গাড়ির জন্য টোল ৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাক ৩২০ টাকা। ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা। সব ধরনের বাসের টোল ১৬০ টাকা। দুর্ঘটনা রোধে ছোট ও কম গতির যানবাহন চলাচল করবে না।

সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, ২৫ বছরের চুক্তির মধ্যে সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের সুবিধা:

সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরের ৩০-৪০ শতাংশ যানজট কমে যাবে। পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে, কমবে পরিবহন খরচ এবং বাঁচবে মূল্যবান কর্মঘণ্টা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply