লিবিয়ার দুর্যোগ কি নিছক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব?

|

ছবি: রয়টার্স

লিবিয়ার প্রাণঘাতী দুর্যোগ কি শুধুই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য বেশি দায়ী মানবসৃষ্ট সংকট। দীর্ঘদিনের নজরদারি আর সংস্কারের অভাবে নেই আবহাওয়া অফিসের তৎপরতা। অব্যবস্থাপনার কারণে ভেঙ্গেছে বাঁধগুলো। সৃষ্টি হয়েছে সুনামি পরিস্থিতির। অবশ্য সেটি মানতে নারাজ বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলো। তাদের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় উৎরে যাওয়া সম্ভব এই সমস্যা।

গত সপ্তাহে ছিল ঘূর্ণিঝড় দানিয়েলের তাণ্ডব। গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সেটির চাপ সইতে না পেরে ভাঙ্গে শহর রক্ষাকারী দুটি বাঁধ। ভাসিয়ে নেয় বিস্তীর্ণ লোকালয়। প্রবল স্রোতের ধাক্কায় ঘরবাড়ি ভেঙ্গে হাজারও মানুষ নিখোঁজ হয় ভূমধ্যসাগরে। বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, এটি কি শুধুই বৈশ্বিক উষ্ণতা বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব?

ডব্লিউএমও’র মহাসচিব পেত্তেরি তালাস বলেন, লিবিয়ায় গত ৫ বছর ধরেই নেই পরিপূর্ণ সরকার কাঠামো। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতোটাই ভঙ্গুর যে চাইলেও সহায়তা করা ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটির আবহাওয়া অফিস কার্যত অচল। কারণ, দীর্ঘদিন চলা সংঘাতে তাদের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আর আইটি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত। সেজন্যেই আগাম সতর্কতা দেয়া যায়নি। তাহলে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব হতো।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বিল হারে বলেন, লিবিয়ার এতো বড় দুর্যোগের জন্য একক কোনো কারণ দায়ী নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা তো রয়েছেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী মানবসৃষ্ট সংকট। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফলাফল বাঁধের এই ফাটল। লিবিয়ার সরকার ব্যবস্থাও নাজুক। সে কারণে আন্তর্জাতিক মহলও সেখানে উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ পরিচালনা করতে পারছে না।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের হিসাব নিকাশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে লিবিয়ার বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলো। তারা বর্তমানে উদ্ধার-ত্রাণ তৎপরতার ওপরই করছে গুরুত্বারোপ। জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতার আহ্বান।

জাতিসংঘের লিবিয়ার প্রতিনিধি তাহের আল সোন্নি জানান, সময়ের সাথে মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যাও বাড়ছে। নিখোঁজ আরও ১০ হাজার বাসিন্দা। সুতরাং এই মুহুর্তে সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা কঠিন। বাস্তুচ্যুত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। দুর্গত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। উদ্ধার থেকে ত্রাণ তৎপরতা পর্যন্ত সবকিছুর জন্যেই প্রয়োজন বৈশ্বিক সেবা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে ত্রিপোলি ও বেনগাজি ভিত্তিক দুটি সরকার শাসন করছে উত্তর আফ্রিকার দেশটি। ২০২১ সালে পরিকল্পনা থাকলেও হয়নি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। উভয়পক্ষের বিবাদের কারণে নেই দীর্ঘমেয়াদী কোন উন্নয়ন প্রকল্প। এমনকি অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল নিয়েও চলে দুর্নীতি।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply