দেড় বছর পর চাকরি ফিরে পেলেন নারী থেকে পুরুষ হওয়া জিবরান সওদাগর!

|

নিজের চাকরি ফিরে পেলেন শারমিন আক্তার ঝিনুক ওরফে জিবরান সওদাগর।

মহিউদ্দিন মধু:

অবশেষে রেলওয়েতে চাকরি ফিরে পেলেন সেই শারমিন আক্তার ঝিনুক ওরফে জিবরান সওদাগর। অস্ত্রোপচার করে নারী থেকে পুরুষ হওয়ার পর সেই নামেই চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন কিনা, এমন জটিলতায় কাটাতে হয়েছে দেড় বছর।

জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভালোবাসার মানুষকে পেতে নারী থেকে পুরুষ, তারপর জীবনটা কাটাতে হয়েছে বড্ড যন্ত্রণায়। তার নাম ছিল শারমিন আক্তার ঝিনুক, নাম পরিবর্তন করে এখন সে জিবরান সওদাগর নামে পরিচিত। শুধু নাম পরিবর্তন নয়, ২০২১ সালে ভারত থেকে স্তন ও জরায়ু কর্তন, পুরুষাঙ্গ পুনঃস্থাপনসহ তিনটি বড় অস্ত্রোপচার করে এখন তিনি নারী থেকে পুরুষ।

জেন্ডার ডিসফোরিয়া অর্থাৎ জন্মকালীন লিঙ্গের সাথে হরমোন ও পরিবেশগত কারণে যাপিত জীবনের লিঙ্গ পরিচয় মেলে না। যেমন, নারী হয়েও অন্য নারীকে ভালো লাগা কিংবা মনোজগতের পরিবর্তন উপলব্ধি করা। কৈশোর থেকেই এমন অস্বস্তিতে ভুগছিলেন ঝিনুক। নিজেকে পরিবর্তন করার কথা ভেবেছেন তিনি। কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ডিঙাবেন কীভাবে? বাড়তি চ্যালেঞ্জ ছিল, ভালোবাসার মানুষকে পাওয়া। সব মিলিয়ে ত্রিশঙ্কু দশা। যার জন্য এতো বড় সিদ্ধান্ত, সেই নারীও ছেড়ে গেছেন অন্য পুরুষের সংসারে।

ট্রান্সজেন্ডার ঝিনুক ওরফে জিবরান সওদাগর বলেন, স্কুল পারপাস ছাড়া আমি কখনও সেভাবে নারীদের পোশাক পরিনি। যার জন্য নিজের জেন্ডার পরিবর্তন করেছিলাম, সেও একসময় বিট্রে করবে, এটা ভাবনাতেও ছিল না। তবে এখন আমি মানসিকভাবে ইতিবাচক আছি।

বিরহ-কষ্ট কাটিয়ে ওঠার আগেই জিবরানকে আদা জল খেয়ে নামতে হয় চাকরি বাঁচানোর লড়াইয়ে। ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় শারমিন আক্তার ঝিনুক নামে রেলওয়েতে ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর ২০২২ সালে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও চাকরিতে যোগদানে টালবাহানা করছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জিবরান জানান, ভারত থেকে আসার পর অফিসিয়ালি যা যা ডকুমেন্টস দরকার ছিল, সবকিছুই আমি জমা দেই। সার্জারি করার পর যে আমি মেডিকেলি ফিট, এটা দেখাই। যে পদবী আমার, তাতে আমার নাম অথবা জেন্ডার নিয়ে সমস্যা হওয়ার কোনো অর্থ নেই। ইন্সপেকশন আগেও করেছি আমি, এখনও করতে পারব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সার্জারি করার কারণে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের লেন্স কিন্তু পরিবর্তন হয়নি।

দেড় বছর কেটে গেলো তার নিজের লিঙ্গ পরিবর্তনের সনদ ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলের ফাইল চালাচালিতে। রেলওয়ের (পশ্চিম) মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানিয়েছেন, যোগদানের অনুমোদন রেল কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছি আজ। ওটা এনডোর্স করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি (জিবরান) যোগদান করতে পারবেন যেকোনো দিন।

সমাজের কটুকথার ভিড়েও জিবরানের পাশে ছিল তার পরিবার ও স্বজন। জিবরান বলেন, মসজিদের ইমাম আমাকে নামাজ মসজিদে এসে আদায় করতে বলেছেন। ইমাম বলেছেন, তোমার অস্বস্তি বোধ করার কিছু নেই। সমাজের লোকজনও ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply