নারী ‘ফায়ার ফাইটার’, যারা জীবন প্রান্তরে একেক জন যোদ্ধা

|

আগুন যোদ্ধাদের কাতারে এখন নারীরাও।

রিয়াজ রায়হান:

মেহেরপুরের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা হালদারের জীবনের শুরুটাই স্রোতের বিপরীত যাত্রায়। সমাজের প্রথাগত নেতবিাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে রীতিমতো বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অল্প বয়সে একাই ঠেকিয়ে দিয়েছেন অন্তত একশ’ পনেরটি বাল্যবিয়ে। স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর পেয়েছেন জাতিসংঘের ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড। তিনি বলেন, আমি যে কমিউনিটি থেকে উঠে এসেছি, সেখানে বলা হতো– মেয়েরা খেলতে পারবে না, স্কুলে যেতে পারবে না। আমি এই বিধিনিষেধ মানতে পারিনি কখনও। আমার বাবার সহযোগিতায় এখানে আসার অনুপ্রেরণা পাই।

যুদ্ধজয়ের সেই স্পৃহা নিয়েই যোগ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মত ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়। কিশোরীকালের বাসনা পূর্ণ হয়েছে যৌবনে। তিনি যোগ করেন, ডিফেন্সে প্রায় প্রত্যেক বাহিনীতে মেয়েরা অংশ গ্রহণ করে। শুধু ফায়ার সার্ভিসে এতোদিন মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল না। মনে স্বপ্ন ছিল, যদি কখনও তারা (ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স) মেয়েদের নিয়োগ দেয়, তাহলে প্রথম ব্যাচের একজন গর্বিত সদস্য যেন আমি হতে পারি।

নানাজনের কটুকথা দমাতে পারেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইয়াসমিন খাতুন বা যশোরের মেয়ে মেহেরুন্নেসা মিমকে। অন্যদের সঙ্গে এই দুজনও মানবসেবার ব্রত নিয়ে যোগ দিয়েছেন ফায়ার ফাইটার হিসেবে। ইয়াসমিন বলেন, ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স যেকোনো পরিস্থিতিতে কখনও পিছুপা হয় না। তারা আস্থা ও ভালোবাসার সাথে কাজ করে। মেহেরুন্নেসা বলেন, পাড়া প্রতিবেশীরা বলতো, ‘মেয়ে বিয়ে দেন। চাকরি করার প্রয়োজন নেই। চুল ছোট করতে হবে কেন?’ আমরা যেহেতু গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ে, আমাদের একচোখে দেখা হয় না।

মেহেরপুরের ‘ফায়ার ফাইটার’ প্রিয়াঙ্কা হালদার

চলতি মাসের আঠারো তারিখ পনের জন নারী ‘ফায়ার ফাইটার’ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে। আগে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলেও ফায়ার ফাইটার পদে এবারই প্রথম। তাই কাজটাও খুব একটা সহজ নয়। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তারা যোগ দবেন কাজে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ নইমুল আহছান ভূঁইয়া বলেন, যখনই এরকম কোনো সংবাদ আসে, বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করার অথবা আগুন লাগার; তখন আমরা ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে স্টেশন থেকে মুভ করে থাকি। এই প্রস্তুতির জন্য তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ব্যাচের পর পর্যায়ক্রমে নারীদের এ পদে নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা আছে অধিদফতরের। এফএসসিডির পরিচালক লে. কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, প্রাথমিকভাবে যে পনেরো জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। এরপর সকল স্টেশনে আমরা নারী ফায়ার ফাইটার নিয়োগ দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছি।

পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সমানতালে দায়ত্বপালনে নারী ফায়ার ফাইটাররাও দক্ষতার পরিচয় দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কর্মকর্তারা।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply