বছর জুড়ে শিশুদের অসুখ, ক্রমেই বাড়ছে ওষুধের ওপর নির্ভরতা

|

আহমেদ রেজা:

শুধু এক-দু’দিন নয়। শিশুদের অসুস্থতা এখন বছরজুড়ে। একটা প্রজন্ম বড়ই হচ্ছে ওষুধের ওপর। গবেষণা বলছে, ধুলো-ধূসরিত ঢাকার বাতাসে দিন দিন কার্বন ও সিসার পরিমাণ বাড়ছে। সব মিলিয়ে আক্রান্ত শিশুরা। চিকিৎসকরা বলছেন, নীরব ঘাতক হয়ে ওঠা এসব উপাদান কমিয়ে আনার ব্যাপারে এখনই সচেষ্ট না হলে পড়বে বিপদে আগামী প্রজন্ম।

ব্যাটারি ভাঙা শিল্প, সীসাযুক্ত পেইন্ট, অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিল, খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত সিরামিকের পাত্র, ই-বর্জ্য, খেলনা, রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলা, প্রসাধনী, খাবার-দাবার, এমনকি চাষ করা মাছের জন্য তৈরি খাবার থেকেও দেশে সীসার দূষণ ঘটে। বেশি সময় সীসার সংস্পর্শে থাকলে শিশুরা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে দেখা দিতে পারে হার্ট ও কিডনি সংক্রান্ত নানা রোগ। এমনকি গর্ভে থাকা শিশুরও ভয়াবহ ক্ষতি করে সীসা। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে আনুমানিক ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আয়েশা আক্তার বলছেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান বাতাসে থাকেই। তবে বেশি মাত্রায় বাতাসে এগুলো যুক্ত হয়ে নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে।

রাজধানীর বাতাসে ধূলা, কার্বন ও সীসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন। ফলে এখনকার শিশুরা বড় হয় অসুস্থতার মাঝে। বিষয়টি গভীরভাবে বুঝতে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে গিয়েছিল যমুনা টেলিভিশনের টিম। সেখানে অভিভাবকরা জানান, জন্মের পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই অসুস্থ আছে তাদের সন্তান। প্রতিনিয়ত ওষুধ চলায় এটি প্রভাব ফেলছে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরও।

রাজধানীর কয়েকটি ফার্মেসিতে কথা বলে যে তথ্য মিললো তা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এসব ফার্মেসিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় শিশুদের ওষুধ। সাম্প্রতিক সময়ে যে পারমাণ শিশুদের ওষুধ বিক্রি করছেন তারা, এর আগে এত পরিমাণ শিশু ওষুধের চাহিদা ছিল না।

বিষয়গুলো অনুধাবন করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাঈদ শিমুল বলেন, এখন শিশুদের এক-দুই দিনের ওষুধ দিলে কাজে দিচ্ছে না। তাদের একসাথে অন্তত ১০-১২ দিনের ওষুধ নেয়া লাগছে। অর্থাৎ অসুখ অল্পতে সারছে না। ফলে ওষুধের ওপর নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। ধুলাবালির আধিক্যের পাশাপাশি এখন

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অসুস্থতা থেকে শিশুদের বের করে আনতে পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে। সেইসাথে মানসিক বিকাশের সুযোগও থাকতে হবে।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply