রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। গণপরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে গণতন্ত্র হয় না, অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ হয়— এ কথা বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলে সংস্থাটি।
ট্রেনে দেওয়া আগুনে তিন বছরের শিশুসহ চারজনকে হত্যা, গণপরিবহণে আগুন, ট্রেন লাইন কাটা ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ঘটনায় সকল রাজনৈতিক মহলকে বিবেকহীন রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট ও জীবননাশের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবি বলে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা, ট্রেনের একটি বগি থেকে মা, শিশুসন্তানসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিপূর্বে গণপরিবহণে আগুন, ট্রেনের লাইন কেটে ফেলার মতো এ সব ঘটনা কোনোভাবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মানুষ পুড়িয়ে কীসের রাজনীতি? ক্ষমতা কি মানুষের জীবনের থেকে বেশি মূল্যবান? মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতির অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।
বলপ্রয়োগ ও সহিংসতাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের মূল উদ্দেশ্য যে প্রক্রিয়ায় জনকল্যাণ থেকে সরে ক্ষমতায় স্থির হয়, ঠিক সেই প্রক্রিয়ায়ই রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকটতর হতে থাকে। মানবতাকে জিম্মি করে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের লাশকে সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা বা দলীয় এজেন্ডা হাসিলের জন্য ব্যবহারের ঘটনাই সময়ের পরিক্রমায় আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিবাদমান দুই রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের সকল মহলের কাছে আমাদের দাবি, নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মাঠ গরম’ আর ‘মাঠ দখল’ এর নামে সকল প্রকার বলপ্রয়োগসহ মানুষের জীবননাশের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসুন। অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশের পথ থেকে সরে আসুন।
তিনি আরও বলেন, চলমান আন্দোলনের মাঝে এসব ধারাবাহিক নৃশংসতার দায় আন্দোলনরত দলগুলো এড়াতে পারে না। আবার, এর পেছনে সরকারি মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ মিথ্যা হলে, তা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের। আমরা সত্যিকারের অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নৃশংসতার সুযোগসন্ধানী রাজনীতি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। অন্যদিকে, সহিংসতা প্রতিরোধের নামে বলপ্রয়োগ, সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা হবে, ঢালাও ধরপাকড় হবে, বিনা বিচারে মানুষ জেল খাটবে, তা-ও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চাই, সহিংসতার বিচার চাই; কিন্তু বিচার নিয়ে রাজনীতি দেখতে চাই না।
/এমএন
Leave a reply