জাকারিয়া হৃদয়:
সাগরপাড়ের জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা তরমুজের বাম্পার ফলনের জন্য খ্যাত। ২০ বছর ভালো ফলন পেয়েছেন সেখানকার কৃষক আনোয়ার হোসেন। কিন্তু ২০২২ সালে হঠাৎ ক্ষেতে নতুন পোকা দেখতে পান তিনি। এতে আনোয়ারসহ এই এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা সর্বশান্ত।
স্থানীয় কৃষকরা বললেন, এত বছর কম-বেশি লাভ হয়েছে। এ বছর তেমন লাভ হয়নি। সব গাছপালা ভেঙে গেছে। কী পোকা আমরা তো বুঝি না।
জলবায়ুর প্রভাবে এমনটা হতে পারে বলে মনে করছেন রাঙ্গাবালী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। বললেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বাড়ছে।
পটুয়াখালীতে সম্প্রতি অনেক ধরনের পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। যেগুলো একদশক আগেও ছিল না। সেই সব পোকার আক্রমণে আম, পেয়ারা, শষা, লিচু, কাঁঠালসহ আরও কিছু ফল নষ্ট হচ্ছে। শীত মৌসুমে কুয়াশার প্রভাবে সবজিতে নানা ধরনের পোকামাকড়ের সংক্রমণ বাড়ছে।
কৃষকরা বলছেন, পাতা সাদা হয়ে গেছে। এর ভেতরে পোকা দেখা যায়। কীটনাশক দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
আর কীটনাশকের এমন অনিয়ন্ত্রিত-অতিরিক্ত ব্যবহারে একদিকে কৃষকের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্যে। দ্রুতই কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পোকা দমনের উপায় বের করার তাগিদ দিয়েছেন গবেষকরা।
পটুয়াখালীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক উপপরিচালক অশোক কুমার শর্মা বলেন, পাতা মোড়ানো পোকা কৃষকেরা আগে দেখেননি। কৃষি বিভাগও এমন আক্রমণ মোকাবেলা করিনি।
কৃষক আর কৃষি কর্মকর্তাদের এমন মতামতের সত্যতা মিলে যায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রতিবেদনে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২০ বছরে ধানক্ষেতের ২৩২ ধরনের পোকা, ১৮৩ ধরনের পরজীবী এবং ১৯২ ধরনের শিকারী পরভোজী প্রাণী পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত হয়েছে। এরমধ্যে ২০ থেকে ৩৩টি পোকামাকড় বিভিন্ন বছর, মৌসুম ও অঞ্চলে ধানের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে গত নয় বছরে মোট চারটি নতুন পোকার সন্ধান মিলেছে। যেসব পোকা কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক রকমের হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের (পবিপ্রবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহসীন হুসাইন বলেন,
এখন আমরা নতুন আকারে ৪টি পোকা নিয়ে কাজ করছি। ধানের ক্ষেত্রে তিনটি পোকা বেশি ক্ষতিকারক। তার মধ্যে একটি হলো মাঝরা পোকা, আরেকটি পাতা মোড়ানো ও অপরটি হলো বিপিএইচ।
এসব পোকা দমনের জন্য বৈজ্ঞানিক বা জৈব প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ গবেষকদের।
পবিপ্রবির কৃষি রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, মিকানিয়া লতা বা জার্মান লতা; এটার আরও নাম আছে, পানের মতো। এ লতা যখন হয়, তখন আশপাশে কোনো পোকামাকড় থাকে না এবং গাছপালা জন্মাতে পারে না।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাদ বলেন, জলোচ্ছ্বাসটা আমরা প্রমাণ করতে পারছি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রমাণ করতে পারছি। এক ডিগ্রি বেড়েছে। আমাদের ভয় হচ্ছে, আগামী ২০-৩০ বছরে এটা ৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়, তাহলে মহাবিপদ।
সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর জনসচেতনতাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার উপায় বলে মনে করেন সবাই।
/এমএন
Leave a reply