ভোটের অর্থনীতি: হাতবদল হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা

|

তৌহিদ হোসেন:

নির্বাচন মানেই অর্থনীতিতে হাজার কোটি টাকার হাতবদল। ঈদ বাদে শুধু ভোটের মৌসুমে এমন দিন দেখে বাংলাদেশ। এতে খুশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

তবে বিপত্তিও আছে। মূল্যস্ফীতির কারণে চড়া ভোটের সরঞ্জামের বাজার। গতবারের তুলনায় নির্বাচন পরিচালনার ব্যয় এবার দ্বিগুণ। সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচের সীমা নিয়ে দিশেহারা অনেক প্রার্থী।

চব্বিশের ভোটে নির্বাচন কমিশনের গাঁট থেকেই খরচ হবে ১৬শ’ কোটি টাকা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মনোনয়ন ফরম, ব্যালট পেপার, সিল, অমোচনীয় কালি, চটের ব্যাগ, ব্যালট বাক্সসহ নানা সরঞ্জামের পেছনে খরচ হচ্ছে এই অর্থ। তবে বড় অংশ ব্যয় হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।

এদিকে, প্রার্থীদের প্রচারণা ঘিরে খরচ আরও বেশি। ব্যানার, ফেস্টুন তো আছেই। পাশাপাশি মাইকিং, আপ্যায়ন, পরিবহন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয়ও চোখে পড়ার মতো।

ইসি থেকে ভোটারপ্রতি খরচের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ১০ টাকা। তাই বলে বেশি ভোটারের আসনে বেশি টাকা ব্যয়ের সুযোগ নেই। ইসির স্পষ্ট নির্দেশ, প্রচারণায় একজন প্রার্থী খরচ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু নির্বাচনের অর্থনীতিতে সবাই কি এই নিয়ম মানেন?

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বললেন, একটা প্রার্থী অহেতুক খরচ করতে বাধ্য হয়। সে হিসেবে ইসি যদি ব্যয়টা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো, তাহলে আমাদের মতো প্রার্থীদের জন্য অনেক ভালো হতো।

ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের দাবি, অত খরচ লাগে না। তারা কেবল গণসংযোগ করছেন, এলাকায় হাঁটছেন শুধু, তাতেই মানুষ-নেতকর্মীরা চলে আসছেন।

ঢাকা-১৮-এর স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ২৫ লাখ টাকা খরচে যে নির্বাচন হবে, তা কিন্তু কঠোর হতে হবে। না হলে আমার মতো লোক দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট হবে।

নির্বাচনী ব্যয়ে মূল্যস্ফীতির দাপট চোখে পড়ার মতো। এবারের আয়োজনে খরচ ২০১৮ এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ২৬৪ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে বাজেট ছিল দেড়শ কোটির বেশি। তার মানে নির্বাচনী উপকরণ ও ব্যবস্থাপনায় খরচ বেড়েছে। কিন্তু ভোটের সুবাদে মন্দার বাজারেও টাকার প্রবাহ বেড়েছে অর্থনীতিতে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, কর্মীদের হাতে অর্থ যাবে। তারা খরচ করবে, তাতে কিছু চাহিদা বাড়বে এবং অর্থের সঞ্চালন হবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হয়। যেটিকে ইতিবাচক বলা যায়।

এই গবেষকের বলা কর্মচাঞ্চল্যের দেখা মিলছে প্রিন্টিং প্রেসগুলোতে। ছেড়ে কথা বলছে না দোকান-রেস্তোরাঁর ভোটের আড্ডা। চায়ের কাপে ঝড় উঠছে অহরহ। অনেকে আবার বেছে নিয়েছেন মাইকিং করার মতো মৌসুমি পেশা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply