কী ঘটেছিল শিশু আয়ানের সঙ্গে?

|

ছবি: সংগৃহীত

গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনা করাতে সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী শিশু আয়ানকে। এসময় তাকে ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে খৎনা করা হয়। তবে অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেস্থেসিয়া’ (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খৎনা করান বলে অভিযোগ করে আয়ানের পরিবার।

পরে অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফিরলে আয়ানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সোমবার (৮ জানুয়ারি) তাকে রূপগঞ্জে দাফন করা হয়।

পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে শিশু আয়ানের। অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার পাশাপাশি সময় নষ্ট করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ জানান, এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে আয়ান তার বড় সন্তান। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া এলাকায়। আয়ানের চাচার অভিযোগ, আংশিক অচেতন করে খৎনা করানোর কথা থাকলেও চিকিৎসকরা আয়ানকে পুরোপুরি অজ্ঞান করেছিলেন। 

এ ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এদিকে, দুই চিকিৎসক অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ সাব্বির আহমেদ ও ডা. তাসনুভা মাহজাবিনসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) আয়ানের মৃত্যুতে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে এবং সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ বলেন, এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিটটি করা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিত্রনায়ক আসলাম তালুকদার মান্না, বিদেশি একজন পাইলট, বিশ্বব্যাংকের একজন কর্মকর্তার মাসহ অনেকে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় রোববার (১৪ জানুয়ারি) সাতারকুল এলাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেয়া হয়।

ওই অফিস আদেশে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের (৫+ বছর) মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদফতরের পরিচালকের (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়।

এছাড়া, দফতরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা ও পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হলো।

এ শহরে দেবদূতেরা মুহূর্তের মধ্যে ‘নাই’ হয়ে যায়। এ শহরে শিশুদের মৃত্যুর জন্য কোনো কারণের প্রয়োজন হয় না। একারণেই বোধহয় জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন—

‘নগরীর সিঁড়ি প্রায় নীলিমার গায়ে লেগে আছে
অথচ নগরী মৃত।
সে সিঁড়ির আশ্চর্য নির্জন
দিগন্তরে এক মহীয়সী,
আর তার শিশু;
তবু কেউ নেই।’

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply