আলমগীর হোসেন:
রেকর্ড কর্মী প্রেরণের বছরে নিম্নমুখী বিদেশে নারীর কর্মসংস্থান। আগের বছরের তুলনায় সংখ্যাটি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৩ লাখের বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তার মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ৭৬ হাজার। এসব কর্মীর মধ্যে ৬৬ শতাংশের কর্মসংস্থান হয়েছে মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে।
প্রশিক্ষণের সময় বৃদ্ধি, দীর্ঘসূত্রতা এবং নারী কর্মী প্রেরণে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে নারী কর্মী প্রেরণ কমেছে বলে দাবি জনশক্তি রফতানিকারকদের।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সব জায়গায় আমাদের অতিরিক্ত সময় লাগে। ট্রেনিং সেন্টারে গেলে আজকেই ভর্তি করা যাবে না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘসূত্রিতায় আমাদের অনেক বেশি সময় চলে যায়। এজন্য আমরা চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠাতে পারি না।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব এম টিপু সুলতান বললেন, সরকার হুট করে ট্রেনিং দুই মাস করে ফেলল। এটা আত্মঘাতীমূলক সিদ্ধান্ত। যার জন্য নারী কর্মী প্রেরণের হার ব্যাপকহারে কমে গিয়েছে। এই ধস কিন্তু এবার না, চব্বিশ সালেও আরও নেতিবাচক হবে।
জনশক্তি রফতানিকারকরা মনে করেন, বিদেশে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হলে দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণকে যুগোপযোগী করা এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন জরুরি।
এম টিপু সুলতান বলেন, নারী কর্মীদের অভিবাসন শতভাগ নিরাপদ করতে হবে। তা করতে হলে আমাদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। প্রশিক্ষণকে এক মাস বা ২১ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা-ইন্টারভিউ সিস্টেম প্রচলন করতে হবে। যারা যোগ্য তারা সার্টিফিকেট পাবে।
আর সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, বাড়ির প্রতি গৃহকর্মীদের টানটা বেশি। তাদের স্কিল নেই, ভাষার সমস্যা আছে। বিদেশে গিয়ে খাদ্যভাসের সাথে অনেকে মানিয়ে নিতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, তাদের ফিরে আসার প্রবণতাও বেশি। সবমিলিয়ে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা না গেলে নারী কর্মী প্রেরণ ব্যাহত হবে।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী কর্মীদের ক্ষেত্রেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের অভিবাসনকে নিরাপদ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে শুধু গ্রহকর্মী প্রেরণের ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসার পরামর্শ তাদের।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান সাকিরুল ইসলাম বলেন, নারী শ্রমিক বলতে আমরা ডোমেস্টিক ওয়ার্কার হিসেবে পাঠাচ্ছি। যাদের একেবারে পড়ালেখা নেই। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরীহ নারীদের আমরা ধরে ধরে বিদেশে পাঠাচ্ছি, শুধুমাত্র গৃহকর্মী। আমরা যদি কেয়ার গিভার হিসেবে নারী কর্মী পাঠাতে পারি, একটু শিক্ষিত জনগোষ্ঠী পাঠাতে পারি, যে একটু পড়তে পারে, কথা বলতে পারে তাহলে কিন্তু এক্ষেত্রে ভালো কিছু করার সুযোগ থাকবে।
দক্ষ নারী কর্মী বিদেশে পাঠানো গেলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
/এমএন
Leave a reply