সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্ররা চমক দেখিয়ে জয় নিশ্চিত করলেও পায়নি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তাই পাকিস্তানের দলগুলোর সামনে এখন একটাই পথ, জোট সরকার গঠন।
সরকার গঠনে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে তাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন)। শনিবার পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে আলোচনার খবর পাওয়া গেছে পাকিস্তানি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে।
তবে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল বলেছেন, পিএমএল-এন বা অন্য কারও সঙ্গে জোট সরকার গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। এমন খবরও পাওয়া গেছে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে।
এদিকে ভোটে স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ের হিসেবে এগিয়ে থাকা পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর খান এখনও সম্ভাবনা দেখছেন তাদের সরকার গঠনের বিষয়ে। তিনি বলছেন, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। গতকাল ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় নির্বাচনে পিটিআই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে দাবি করে গহর খান আরও বলেন, জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৭০টিতে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৪ জনের জয়ের ঘোষণা পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দিয়েছে। তাই, এককভাবে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া ২২টি আসনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, সেসব আসনে ফল পাল্টে তাদের হারিয়ে দেয়া হয়েছে। জোট গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পিএমএল-এন অথবা পিপিপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি তারা।
পিটিআই চেয়ারম্যান আশাব্যক্ত করে বলেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী তাদের সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানাবেন। যেহেতু জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন তাই সংবিধান অনুযায়ী তাদেরকেই সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এদিকে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে ২৫৬টি আসনের ফল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৯২টিতে জয় পেয়েছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৭টি আসন। পিপিপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছে ৫৪টি আসনে। আর ৩৩ আসনে অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এরমধ্যে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ১৭টি আসনে জয় পেয়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন। তার মধ্যে ৭০টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ২৬৫টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে তিন দিন পার হলেও ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে এখনও ৯টি আসনের ফলাফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। তবে এর আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, কেউ এককভাবে ক্ষমতায় যাচ্ছে না দেশটিতে।
যদিও ভোটের আগে থেকে বিশ্লেষকরা বলছিলেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পারে পিএমএল-এন। আর পিটিআই নেতাদের ভরাডুবি হবে। ক্ষমতা হারিয়ে জেলে যান ইমরান খান। কারাদণ্ডিত হয়ে ভোটেও অংশ নিতে পারেননি। তার দলও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। তবে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে চমক দেখান।
পাকিস্তানে সরকার গঠনে সংরক্ষিত মিলে দরকার পড়ে ১৭২টি আসনের। তাই আগামীতে পিএমএল-এন ও পিপিপি সরকার গঠন করলেও শঙ্কার চিহ্ন থেকে যাচ্ছে। কেননা, দেশটির ‘অনিশ্চিত’ রাজনীতিতে সংসদে জোট সরকার ও বিরোধী দলের ব্যবধান থাকছে কম। তাই জোট সরকারে থাকা কোনো দল বা তাদের কিছু সংখ্যক সংসদ সদস্য বিরোধীদের সাথে আঁতাত করলে দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী ফের অভিশংসনের মুখে পড়বে।
নির্বাচনের ফল, জোট সরকার গঠনের পাশাপাশি দেশটির এবারের নির্বাচনে আলোচনায় ফলাফল ঘোষণা নিয়ে। ভোটগ্রহণের তিন দিন পরও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। দেরি হওয়ার জন্য মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করাকে দায়ী করেছে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তবে, ভোটের ফল পাল্টে দিতে দেরিতে ঘোষণা আসছে বলে অভিযোগ তুলেছে পিটিআই। যেটিকে নজিরবিহীন বলে আখ্যাও দিয়েছেন দলটির মুখপাত্র রউফ হাসান।
/এমএইচ
Leave a reply