মাসুদুজ্জামান রবিন:
১৯৭১ সালে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের অর্থনীতি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির মাথাপিছু আয়, রফতানি ও প্রবাসী আয় সবকিছুই ছিল তলানিতে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এগিয়েছে দেশ।
স্বাধীনতার পর মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট প্রায় হাজার গুণ বেড়ে এখন ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনেক সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এগিয়ে বাংলাদেশ। ৫৩ বছরের বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
পরিকল্পনা কমিশন, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সবটাতেই ইতিবাচক অগ্রগতি এসেছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে সেটা নয়, সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক সূচকগুলোতে অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াতেই এগিয়ে আছে তা নয়, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে এগিয়ে আছে।
প্রায় এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ডায়মন্ড, ইমার্জিং টাইগারসহ বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হচ্ছে। যদিও অর্থনীতিতে আছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রচলিত অর্থনীতির বিপরীতে নতুন অর্থনীতির যে চাহিদা তা আমাদের জন্য সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসছে। যোগাযোগ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য— এই সম্পর্কগুলোকে একীভুত করে এখন এসবে আমাদের নজর দিতে হবে।
নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, সঙ্কাটাপন্ন ব্যাংকিং খাত অর্থনীতির অনেক অর্জনকে ম্লান করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের অভিমত, দুষ্টচক্রের জালে আটকা পড়ে গেছে দেশের আর্থিক খাত।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এখানে অনেকগুলো দুষ্টচক্র আছে। যাদের সিন্ডিকেট বলা হয়। ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেমন আছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন, আলুর বাজার, চালের বাজারসহ সব ক্ষেত্রে এরা আছে। তারা সরকারের সঠিক নীতিগুলোকে বাস্তবায়ন করতে দেয় না নিজেদের স্বার্থে।
আর্থিক খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনীতিকে বেগবান করার জন্য অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ ধরে রাখার পরামর্শ সিপিডির বিশেষ ফেলোর।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতিও লাগবে। সুশাসন, স্পষ্টতা, জবাবদিহিতা লাগবে। অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ অর্থনীতিকে আরও বেগবান করতে পারে।
আগামী দিনের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তি নির্ভরতার ভিত্তি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগবান্ধব নীতিকাঠামো চান উদ্যোক্তারা।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদী পলিসি না পেলে আমাদেরও পলিসি তৈরি করতে বেগ পেতে হয়। আমরা বিনিয়োগ করতে পারি না।
/এমএন
Leave a reply